গত অর্থবছরে গফরগাঁওয়ে জনপ্রতি ওষুধের বরাদ্দ ছিল দুই টাকা!

 

 

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জনের কার্যালয়সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ময়মনসিংহ জেলার ১১ উপজেলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওষুধ বাবদ বরাদ্দ ছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা।এই বরাদ্দ থেকে গফরগাঁও উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের জন্য দেওয়া হয়েছিল সর্বনিম্ন মাত্র ১১ লাখ টাকা।অর্থাৎ,এ উপজেলায় জনপ্রতি ওষুধ বাবদ বরাদ্দ ছিল মাত্র দুই টাকা!বিপরীতে প্রায় তিন লাখ মানুষের হালুয়াঘাট উপজেলার জন্য বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা।এই বরাদ্দ বৈষম্যের কারণে গফরগাঁওবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।এই বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন বলেছেন,‘অনলাইনে তথ্য পাঠানোর সময় বিভ্রাটের কারণে ওষুধ বাবদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য হয়েছে।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে,গত অর্থবছরে জেলার ১১ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওষুধ বাবদ স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা। স্বাস্থ্যসেবায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে উপজেলাগুলোয় এই অর্থ থেকে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম। এই অর্থ থেকে গত অর্থবছরে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ৭৫ লাখ টাকা, ফুলপুর ৫৩ লাখ, মুক্তাগাছা ৪৯ লাখ, গৌরীপুর ৪৪ লাখ, ভালুকা ৪০ লাখ, ঈশ্বরগঞ্জ ৩৭ লাখ, নান্দাইল ৩৩ লাখ, ত্রিশাল ৩২ লাখ, ধোবাউড়া ২৯ লাখ, ফুলবাড়িয়া ২৫ লাখ ও গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১ লাখ টাকা।

ওষুধ বাবদ বরাদ্দ সর্বনিম্ন হলেও জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা গফরগাঁও। এ উপজেলার জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। আর সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া হালুয়াঘাটের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ।গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলম আরা বলেন, ‘গত অর্থবছরে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি বাবদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিপোর্ট পাঠাতে ভূল করায় সর্বনিম্ন বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল।’ ডা. আলম আরার দাবি, ওই রিপোর্ট তিনি যোগদানের আগের কর্মকর্তা ডা. ওয়াইজ উদ্দিন ফরাজীর সময়ে করা।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে এই অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে এলাকার মানুষজনকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী শেখ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীদের ভিড় থাকলেও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী হাসপাতালের স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হতো না। ওষুধ না পেয়ে গরিব রোগীদের বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হতো। সারা বছরই এরকম কম ওষুধ দেওয়া হয়।’ প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের কথা কাটাকাটি হতো বলেও জানান তিনি।

গত অর্থবছরে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি বাবদ সর্বনিম্ন বরাদ্দের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাদল বলেন, ‘ওষুধ বাবদ পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় গফরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যাদের কারণে ওষুধ বাবদ বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে, চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনলাইনে তথ্য পাঠানোর বিভ্রাটের কারণে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি বাবদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য হয়েছে। এই বৈষম্য দূর করে সংশোধনীর মাধ্যমে বাড়তি বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার লেখালেখি করেও কাজ হয়নি।’ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি বাবদ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।

/এএম/