হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একশ শয্যায় উন্নীত করা হয় নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালটি। আগে এটি ৫০ শয্যার হাসপাতাল ছিল। ২০১৩ সালে এর অবকাঠামোগত কাজ শেষ ও জনবল নিয়োগ শুরু হয়। তবে একশ শয্যার জন্য প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত ২২৩টি পদের প্রস্তাব করা হলেও মাত্র ৩৫টি পদ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির মাত্র পাঁচটি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নড়াইল সদর হাসপাতালটিতে ৩৯টি চিকিৎসক পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৭ জন। এর মধ্যে তিনজন চিকিৎসক সংযুক্তিতে কাজ করছেন। হাসপাতালে সিনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসকের আটটি পদ থাকলেও গাইনি, কার্ডিওলজি ও সার্জারি বিভাগ ছাড়া মেডিসিন, চক্ষু, নাক-কান-গলা, এনেসথেসিয়াসহ পাঁচটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসকের ১১টি পদ থাকলেও আছেন শুধুমাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ। ৫টি সহকারী সার্জনের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আউটসোর্সিংয়ের আওতায় ১২ জনের জায়গায় ৪০ জন আয়া, সুইপার ও নাইটগার্ডকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হলেও শর্ত মোতাবেক বেতন না দেওয়ায় তারাও ঠিকমতো ডিউটি পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, ভালো কোনও ডাক্তার এ হাসপাতালে যোগ দিলে তাকে দ্রুত অন্যত্র বদলি করে দিতে উঠেপড়ে লাগে চেম্বার ও ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা। দালালদের খপ্পড়ে রোগীরা নিয়মিতই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও রোগীরা অভিযোগ করেছে।
হাসপাতালের সংকট ও রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ড. সুজল কুমার বকশি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রয়োজনের চেয়ে কম চিকিৎসক নিয়ে ইমার্জেন্সি, আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন কাজ। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ইনডোরে ১৭০ ও আউটডোরে ২৬০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১৯ জনের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন।’
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অনিতা সাহা বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে এ হাসপাতালে ১৭ সিটের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) চালু রয়েছে। নবজাতকদের তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও
দালালের তৎপরতা স্বীকার করে নিয়ে হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল কাদের জসিম বলেন, ‘হাসপাতালের দালালদের আনাগোনা আছে, এটা ঠিক। তবে হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে জরুরি বিভাগ ও আউটডোরসহ কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে।’
নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. বিদ্যুৎ কান্তি পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। আমরা লোকেশন চিহ্নিত করেছি। এরই মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ নির্ধারিত স্থানের মাটি পরীক্ষা করেছে।’ হাসপাতালটির আধুনিকায়ন হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন-
খুলনা ডিবির ২ এসআইসহ ৫ জন বরখাস্ত
বন্যার পানিতে বগুড়ার ৮২টি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
/এএইচ/টিআর/