ফাতেমার সহকর্মী চেমন আরা বলেন, ‘ফাতেমা কিভাবে এই পাহাড়ে বসবাস করতো মাথায় আসে না। আমাকে রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দিলেও আমি এত ঝুঁকি নিয়ে এই পাহাড়ে থাকতাম না। একটা কেন, দশটা প্লট দিলেও আমি এখানে থাকবো না।’
শুধু চেমন আরা নয়, শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুরে সহকর্মীর লাশ দেখতে এসে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় অবস্থিত ওই গার্মেন্টসের অনেক পোশাক শ্রমিক ফাতেমার মৃত্যুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকে দায়ী করেছেন।
সিঁড়ি বেয়ে ফাতেমার ঘরে উঠতে গিয়ে রেনু বেগম নামের আরেক সহকর্মী বলেন, ‘ফাতেমা কিভাবে প্রতিদিন এই পাহাড়ে ওঠা-নামা করতো বুঝে আসে না। রাত ১০টায় গার্মেন্টস ছুটির পর সে কিভাবে এই ঘরে আসতো? আমি হলে একদিনও পারতাম না।’
শুক্রবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে পাহাড় ধসে পড়ে ফাতেমার ঘরের ওপরে। জঙ্গল সলিমপুর এলাকার লটকন শাহ মাজারের শেষ প্রান্তে তিন নম্বর সমাজে পাহাড়ের ঢালে এর অবস্থান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ওই ঘরে নিহত ফাতেমাসহ আরও ৯ জন ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের মধ্যে তার স্বামী রফিকুল ইসলাম, ছেলে ইউনুস, মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও সালমা ছিলেন। এছাড়া এদিন ওই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তাদের বাসায় বেড়াতে আসা তার ননদ রাবেয়া, তার দুই মেয়ে সামিয়া ও লামিয়া এবং রফিকের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন। পাহাড় ধসে পড়লে রফিক ও গিয়াস উদ্দিন কোনোমতে বেঁচে যান। পরে তারা চিৎকার শুরু করলে আশাপাশের ঘর থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে ফাতেমার মেয়ে জান্নাত ও সালমাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। অন্যরা মাটি চাপা পড়ে মারা যান। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পাশের ঘরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, ‘ভোরে হঠাৎ রফিকের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, তাদের ঘরের একাংশে পাহাড় ধসে পড়েছে। দ্রুত সেখানে গিয়ে তার দুই মেয়েকে উদ্ধার করি। অন্যরা ধসে পড়া মাটিতে চাপা পড়ায় তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ধসে পড়া মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
/এনআই/ এপিএইচ/