বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের মাঝে আতঙ্ক

বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন সিরাজগঞ্জের বন্যা কবলিতরাসিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রানীগ্রাম থেকে কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ির ঢেঁকুরিয়া পর্যন্ত পাউবোর প্রায় ২৭ কি. মি. বাঁধ। এ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন সিরাজগঞ্জের বন্যা কবলিত সদর, কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৪ লাখ পানিবন্দি মানুষের বেশিরভাগ। তবে বাঁধজুড়ে পানি চুয়ানো (সিপেজ বা মুড়ালি) রয়েছে। যে কারণে এখানকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছেন। ফেলে আসা ঘরবাড়ি নিয়েও তারা চিন্তিত। চুরি হওয়ার আশঙ্কা তাদের। তবে বাঁধ ভাঙার আতঙ্কই বেশি।

সরেজমিন দেখা গেছে খোলা আকাশের নিচে বাঁধের ওপর পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে ঝুপড়ি তুলে গবাদি পশু ও স্বজনদের নিয়ে কোনমতে দিন কাটাচ্ছেন তারা। যমুনা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটু একটু করে কমায় কিছুটা স্বস্তি আসলেও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক এখনও কাটেনি বানভাসিদের।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকালে সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পার পাঁচিল এলাকায় পাউবোর বাঁধে গেলে কথা হয় বাঁধে আশ্রয় নেওয়া দিনমজুর জহুরুলের সঙ্গে। গবাদি পশু আর স্বজনদের নিয়ে বাঁধে ঝুপড়ি তুলে থাকছেন তিনি। তিনি জানান, গবাদি পশুর জন্য খড় কেনার টাকা-পয়সা নেই। তাই অন্যের বাঁশ ঝাড় থেকে পাতা কেটে এনে খাওয়াচ্ছেন।

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি গরুর জন্য বাংশ পাতা কাটছেনপাশেই ঝুপড়ি তুলেছেন পার পাঁচিল গ্রামের ধোপাস্ত্রী ঝর্ণা রানী দাস। পাউবোর বাঁধের বাইরে পার পাচিল গ্রামের প্রধান সড়ক গত ক’দিন আগে যমুনার স্রোতে ভেসে যায়। হুহু করে গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। দিনের মধ্যে একে একে প্রায় আশপাশের শতাধিক বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়। ঝর্ণার বাড়িতে এখন গলাপানি। গরু-ছাগল ও ছেলেপুলে এবং স্বামী অখিল চন্দ্র দাসকে নিয়ে সেও এখন বাঁধে।

ঝর্ণা বলেন, ‘দাদা বাঁধের নিচ দিয়ে এত পানি চুয়ানো দেখে ভয়ই হয়। আতঙ্কে আছি আমরা। শুনতাছি পানি কইমতাছে। পানি নামলেই বাড়ি ফিরে যাবে।’

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ সে. মি. কমলেও বিপদসীমার এখনও ১২৮ সে. মি. ওপরে রয়েছে। যমুনার পানি কমতে শুরু করায় নদী পাড়ের মানুষদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে, এখনও দুর্ভোগ কমেনি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘সদরের রানীগ্রাম থেকে কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ২৭ কি. মি. বাঁধের বিভিন্ন স্থানে সিপেজ হলেও তা মেরামত করা হয়েছে। বাঁধের সঙ্গে স্থানীয়রা ঘরবাড়ি তোলায় অসংখ্য ইঁদুরের গর্তের কারণে এসব সিপেজ দেখা দেয়। আর তাছাড়া একদিকে বালির বাঁধ, অন্যদিকে যমুনার পানির উচ্চতাও অনেক ছিল। পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সময়ও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক থাকে।

/এনআই/

এ সংক্রান্ত আরও খবর:
বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা

এক এলাকার ত্রাণ অন্য এলাকায় বিতরণের অভিযোগ