শান্তিলতার ‘শান্তিনীড়’

শান্তিলতার হাতে চাবি তুলে দিচ্ছেন অভয়নগরের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মনদীপ ঘরাই (ছবি-প্রতিনিধি)

বাচ্চাদের স্কুলের জন্য দান করেছিলেন নিজের জমি, তারপর বন্যায় হারিয়েছেন বসবাসের শেষ সম্বল বাড়িটা। এরপর পথে বসেছিলেন বর্ষীয়ান শান্তিলতা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তিনি খুঁজে পেয়েছেন ‘শান্তিনীড়’-এর ঠিকানা।

শান্তিলতা ঘোষ (৯০) নামের এই দানশীল বিধবা নারী তার পোষ্য ছেলে, দুই নাতি আর ছেলে বৌকে নিয়ে বাস করতেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার মাগুরায় মাটির তৈরি ছোট্ট একটি বাড়িতে। এর বাইরে অল্প জমিও ছিল তার। এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দুটি বিদ্যালয় বানাতে পৈত্রিক জমিটুকু নিঃস্বার্থে দান করেছিলেন। শেষ সম্বল হিসেবে বাকি ছিল ওই বাড়ির ভিটাটুকুই। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায় তার শেষ আশ্রয়। দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা যশোরের অভয়নগরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনদীপ ঘরাইয়ের চোখে পড়ে। এরপর তো তার একটা ব্যবস্থা হলো। কিন্তু তার আগে যা হয়েছিল তা মোটেও সুখকর নয়।

শান্তিলতার ‘শান্তিনীড়’ (ছবি-প্রতিনিধি)

স্থানীয়রা জানান, শান্তিলতা ঘোষ নিজের  সাড়ে সাত বিঘা পৈত্রিক জমি দান করেন এলাকার দুটি বিদ্যালয়কে। একটি হচ্ছে মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং অপরটি মাগুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। দান হিসেবে জমি নেওয়ার পর শান্তিলতার কোনও খোঁজ রাখেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত জুলাই মাসে তার ভিটেবাড়িতে শুরু হয় সাপের উপদ্রব। খোঁজাখুঁজির পর মেলে ৫টি জাত সাপ। তবে এই খোঁজাখুঁজির তোলপাড়ে আর বৃষ্টিতে ভেঙে যায় শান্তিলতার শেষ আশ্রয় মাটির ঘরটি। খোলা আকাশের নিচে পুরো একটা দিন কাটে শান্তিলতা ও তার পরিবারের। পরবর্তীতে খবরটি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে শান্তিলতার কাছে ছুটে যান যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মনদীপ ঘরাই।    

এ ব্যাপারে মনদীপ ঘরাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমে আড়াই বান্ডিল টিন আর সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা হয়  ঘর নির্মাণের কাজ। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিসহ অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।  মোট ৬ বান্ডিল টিন ও ৪০ হাজার টাকা খরচে গড়ে তোলা হয় নতুন একটি ঘর। এ নিবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শান্তিলতার শান্তিনীড়’। শেষ জীবনে তিনি যেনও শান্তিতে থাকতে পারেন এটাই আমাদের কামনা।


/এসএসএ/এএইচ/