শেরপুরে বন্যার পানি কমছে, ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে

ত্রাণের আশায় নদীর তীরে বা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকছেন বন্যার্তরা (ছবি-প্রতিনিধি)

শেরপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্য নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। বন্যার্তরা ত্রাণের আশায় সারাদিন নদীর তীরে বা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকছেন। কোনও একটি নৌকা বা ট্রলার দেখলেই পানি ভেঙে ও সাঁতরিয়ে ছুটে আসছেন, কেউ ত্রাণ নিয়ে এসেছে কিনা তা দেখতে। স্থানীয় সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, সদর উপজেলায় রাজনৈতিক দলগুলো কিছুটা ত্রাণ তৎপরতা চালালেও সরকারিভাবে কোনও ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মোস্তফা মিয়া জানান, শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় তিন সেন্টিমিটার  কমেছে।

শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের কুলুরচর-বেপারীপাড়া গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বেশি। ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ঘরবাড়ি হারানো অন্তত তিনশ’ পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে পাঁচ দিন আগে কুলুরচর-বেপারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যান রুমা বেগম। সেখানে খেয়ে না খেয়ে তারা কষ্টে দিন পার করছেন ।

শেরপুরে ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে (ছবি-প্রতিনিধি)

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. জাফর মিয়া জানান,ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে থাকা মানুষদের জন্য কুলুরচর-বেপারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে কোনও ধরনের সহায়তা কিংবা  ত্রাণ তৎপরতা নেই।

শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সদর উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য সাত মেট্রিক টন খয়রাতি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাসরিন জানান, শ্রীবরদীর বন্যার্তদের মাঝে খয়রাতি চাল বিতরণ করা হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আশারাফ উদ্দিন জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ২০ হেক্টর ও আংশিকভাবে এক হাজার পাঁচশ’ ৭০ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং প্রায় পাঁচ শতাধিক হেক্টর জমির সবজির আবাদ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা যায়, বন্যায় জেলার তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর সদরের আটটি  ইউনিয়নের ৩৩টি, শ্রীবরদীর দুটি ইউনিয়নের ৩৫টি এবং নকলার চারটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৪০-৪৫  মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে বন্যার কারণে চরাঞ্চলের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকায় সদর উপজেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০টি মাদরাসা এবং একটি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

/এএইচ/