তিন আদালতে বিচারক নেই, ঝুলে আছে হাজারও মামলা

জামালপুর

জামালপুরের তিন আদালতে কয়েক হাজার মামলা ঝুলে আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নেই বিচারক। এতে বিচার কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্ভোগে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।তারা দিনের পর দিন আদালতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বাড়ছে তাদের মামলা পরিচালনার খরচও। জেলা জজ কোর্ট, নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত ও বিশেষ আদালত সূত্র এবং বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে দায়ের করা এক মামলার বাদী রহিমা আক্তার রেখা জানান, তারিখ পড়লেই মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হয় তাকে। এতে তার খরচ হয় প্রায় ৩০০ টাকা। একইসঙ্গে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। প্রতি তারিখে মোট ৮০০ টাকা খরচ হলেও বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রমের কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। আর এদিকে মামলা পরিচালনার অতিরিক্ত টাকা যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

একই অবস্থা সরিষাবাড়ির খন্দকার কুদ্দুস, দেওয়ানগঞ্জের সেলিনা আক্তার মনি, ইসলামপুরের সভার চরের সপ্না আক্তার, সদরের দিগপাইতের রহিমা খাতুনেরও। বিচারক না থাকায় মামলার তারিখ পড়লেও অগ্রগতি হচ্ছে না তাদের দায়ের করা মামলার। এতে প্রতি তারিখে যাতায়াত ও আইনজীবীর পেছনে তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। ভোগান্তি কমাতে দ্রুত বিচারক নিয়োগের দাবি জানান এসব বিচারপ্রার্থী।

জেলা জজ কোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৩ জুলাই থেকে নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বিচারক নেই। অথচ এখানে প্রায় ৩ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ট্রাইবুনালের মামলাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। কিন্তু জেলা ও দায়রা জজ আদালত ব্যস্ততম হওয়ায় এখানে নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের মামলাগুলোর কেবল জামিন শুনানি চলে। তাই নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণসহ অন্যান্য সব প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। এদিকে, দিনের পর দিন আদালতে ধরনা দিয়ে বিচার না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। বারবার মামলার তারিখ পরিবর্তনের কারণে বিচারপ্রার্থীদের খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

একই অবস্থা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত এবং বিশেষ আদালতেরও। গত ১ মার্চ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে বিচারক নেই। এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ১৫শ’। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ আদালতে বিচারক নেই। এ আদালতে মামলা সংখ্যা ৭০০। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল পরিচালনা করছেন অতিরিক্ত জেলা জজ। এখানেও বিচারাধীন মামলা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। সব মিলিয়ে এসব আদালতে প্রায় ছয় হাজার মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে।

জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সরওয়ার জাহান জানান, বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে মামলা জটও। এসব আদালতের অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত বিচারক নিয়োগ করে মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি কমানোর দাবি জানান তিনি।