মঙ্গলবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসব কথা বলেন, সাথীর বাবা গোলাম রব্বানী। তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর মন্ডলপাড়ার মাছ ধরার জাল ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক।
সাথীর বাবা গোলাম রব্বানী বলেন, ‘সাথী বাড়ি থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে কোচিংয়ে যেত। গত দু’মাস ধরে পাশের হেরুঞ্জা মীরপাড়ার বাসিন্দা ও জিয়ানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মীর আমিনুর রহমানের ছেলে হুজাইফাতুল ইয়ামিন তাকে (সাথী) উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি মীর আমিনুর রহমানকে জানানোর পর তিনি ছেলেকে শাসন না করায় উল্টো আমার মেয়েকে উত্ত্যক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে গত ৪ অক্টোবর জিয়ানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম তালুকদারের কাছে নালিশ করা হয়। রবিবার সকালে সাথী কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে কোচিং করতে দুপচাঁচিয়া সদরে যায়। পথে ইয়ামিন ও তার ২-৩ জন বন্ধু সাথীর পথরোধ করে। এ সময় অন্য ছাত্রীরা পালিয়ে যায়। তখন ইয়ামিন সাথীর হাত ও ওড়না ধরে টানাটানি করে ।’
সাথীর বাবা বলেন, ‘প্রাইভেট শেষে সাথী জিয়ানগরবাজারে আমার সঙ্গে দেখা করে। ইয়ামিনকে শাসন করার ব্যাপারে জানতে চায়। ইয়ামিনের বাবা ও চেয়ারম্যানকে বলে লাভ হয়নি; তাই শিগগিরই আইনের আশ্রয় নেবো বলে আমি সাথীকে স্কুলে যেতে বলি। কিন্তু সাথী স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে যায়। মা রিক্তা বানু তাকে স্কুলে না যাওয়ার কারণ জানতে চায়। তখন সাথী তার মাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়। এছাড়া মায়ের সঙ্গে ভাত খাবে বলে তাকে রান্না করতে বলে। মা বাথরুমে গোসল করতে গেলে সাথী ঘরে ঢুকে মায়ের ওড়না ঘরের তীরের (আড়া) সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।’
গোলাম রব্বানী আরও জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা টের পেয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় তিনি থানায় গিয়ে তার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বখাটে ইয়ামিন ও তার বাবা আমিনুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গ্রামবাসীরা জানান, স্কুলছাত্রী সাথী আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে তার বাবা দুপচাঁচিয়া থানায় আমিনুর ও ছেলে ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাত ৮টার দিকে পুলিশ বজরাপুকুর বাজারের দোকান থেকে আমিনুরকে গ্রেফতার করে। এ সময় সাথীর স্বজনরা আমিনুরকে চড়-থাপ্পড় দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমিনুরের সমর্থকরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আমিনুরকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় এসআই আবদুর রহিমের ওয়াকিটকিও কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের মারধরে তিন কর্মকর্তাসহ ৫ পুলিশ আহত হন। পুলিশ রবিবার রাতে ব্লকরেইড দিয়ে ২৬ জনকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে এসআই রহিম থানায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা আমিনুরকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন।
জিয়ানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম তালুকদার জানান, সাথীকে উত্ত্যক্ত করার ব্যাপারে তার বাবা কখনও অভিযোগ করেননি। সাথী আত্মহত্যা করার পর তিনি বিষয়টি জেনেছেন। তিনি দাবি করেন, গোলাম রব্বানীরা তার নির্বাচনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এ কারণে তিনি মিথ্যাচার করছেন।
দুপচাঁচিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, স্কুলছাত্রী রোজিফা আকতার সাথীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার প্রধান আসামি হুজাইফাতুল ইয়ামিন ও তার বাবা মীর আমিনুর রহমানকে পুলিশ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। তাদের গ্রেফতারে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওয়াকিটকিও উদ্ধার হয়নি। পুলিশের ওপর হামলা, ওয়াকিটকি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ২৬ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’