বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ঢুকিয়ে যদি কেউ অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাইলে সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ সময় তিনি ন্যায়বিচার ও জনগণের সুবিধার্থে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করার দাবি জানান।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন তিনি। এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ডা. আব্দুল আহাদ প্রমুখ। এ সময় দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব ও আবু সাঈদ লিয়ন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক নাজমুল হাসান সোহাগ, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দান থেকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সমর্থন পেতে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়।
আখতার হোসেন বলেন, ‘দিনাজপুরের একজন সাবেক অধ্যক্ষ আমাকে বলেছেন, ভাই, শুধু দাড়ি আর টাকনুর ওপরে পায়জামা পরার কারণে জঙ্গি বলে আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই ছিল শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, এই ছিল আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মুসলমানরা সামান্য দাড়ি রাখার কারণে, টাকনুর ওপর পায়জামা পরার কারণে মিথ্যাভাবে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের নিপীড়ন করেছে শেখ হাসিনা। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেই নতুন বাংলাদেশে দাড়ি রাখার কারণে, টুপি পরার কারণে কোনও মানুষের ওপরে ন্যূনতম নির্যাতন আমরা হতে দেবো না। বাংলাদেশের মানুষ, উত্তরবঙ্গের মানুষ তারা হিন্দু-মুসলিম তাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নাই। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্ষেতে খামারে কাজ করি, একসঙ্গে ফসল ওঠাই- আমরা একসাথে বাজার করি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ঢুকিয়ে যদি কেউ অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাইলে তাহলে সব ধর্মের মানুষ, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। শহীদ সুমন পাটোয়ারীর গর্বিত বাবা ওমর ফারুক আমাকে জানিয়েছেন, ঐক্যমত্য কমিশনে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। শহীদ সুমনের বাবা জানিয়েছেন, আমরা উত্তরাঞ্চলের মানুষ, আমাদের বিচার পাওয়ার জন্য ঢাকায় হাইকোর্টে যেতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ বিভাগে বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ পাবে, তাদের উপকার হবে। বাংলাদেশের মানুষ সহজে ন্যায়বিচার পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন বন্দোবস্তের ধারণা নিয়ে, নতুন বন্দোবস্তের প্রতিষ্ঠার লড়াই নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে এনসিপির যাত্রাকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এনসিপির এই যাত্রাপথে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের মানুষেরা, আমরা যারা উপস্থিত আছি, আমরা যারা দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই অনুষ্ঠানকে ফলো করছি, আমরা প্রত্যেকেই এনসিপির এই যাত্রাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবো। দিনাজপুরের মাটি আজকে যে এনসিপির দুর্গে পরিণত হয়েছে, সেই দুর্গকে সঙ্গে নিয়ে, দিনাজপুরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি সামনের দিকে তার কর্মসূচি নির্ধারণ করবে।’