তনু হত্যা মামলায় ১৯ মাসেও কোনও ‘খবর’ নেই

তনু হত্যাকাণ্ডকুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডের ১৯ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ অক্টোবর। দীর্ঘ এ সময়েও মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতির কোনও খবর নেই। খুনি চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার ও কুমিল্লার সাধারণ মানুষজনও।

তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, গত বছরের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর ফেরেননি কলেজছাত্রী তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পান। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তেও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা–এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। ১৯ মাসেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় মেয়ে হত্যার বিচার নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কুমিল্লার আমোদ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাকীন রাব্বী বলেন, ১৮ মাসেও তনুর হত্যাকারী শনাক্ত না হওয়া দুঃখজনক। তনুর হত্যাকারীরা শনাক্ত এবং বিচার না হওয়ায় দেশে ধর্ষণ ও নারী হত্যার ঘটনা বাড়ছে।

সুজন কুমিল্লার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইমুনা আক্তার রুবি বলেন, দেশে প্রতিদিনই নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ সামাজিক অস্থিরতা রোধে তনু হত্যার বিচার প্রয়োজন।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আলম রায়হান বলেন, দীর্ঘদিন মামলাটি সিআইডির কাছে পড়ে আছে। মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। আমার তো মনে হয়, মামলাটি হিমাগারে চলে গেছে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে আইনের আওতায় নিলে হত্যার ঘটনা বেবিয়ে আসবে। কারণ, তাদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, নিজেরা না খেয়ে মেয়েকে ভালো পরিয়েছি, ভালো খাইয়েছি। তারা তনুকে মারেনি, তার স্বপ্নকে হত্যা করেছে। মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। তনু বলেছিল, আর তিন বছর লেখাপড়া করতে দাও। সারা জীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছ। এমন কিছু করবো যেনো সারা দেশ আমাকে চেনে। মেয়েকে এখন সবাই চিনেছে, তবে মৃত্যুর পর! হতভাগী এই মা মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বরাবরের মতো বলেছেন, তনু হত্যার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করে যাচ্ছে। তদন্তের বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।