সিডরের ১০ম বর্ষপূর্তি: ধ্বংসের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ

সিডর

আজ সেই দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত  ভয়াল ১৫ নভেম্বর। উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের এই দিনেই আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন সিডর। সেই হিসেবে সিডরের দশম বর্ষপূর্তি আজ। প্রকৃতি লণ্ডভণ্ড করে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল সিডর। এই দিনটির দুঃসহ স্মৃতি আর বেদনা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জড়িয়ে আছে। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এর স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ। 

সরকারি হিসাবে সিডরে বাগেরহাট জেলায় নিহত হয়েছিল ৯০৮ জন, আহত ১১ হাজার ৪২৮ জন। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৬০০ বাড়িঘর। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা এক লাখ ছয় হাজার। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে পাকা পাঁচ কি.মি. এবং কাঁচা প্রায় ৫০ কি.মি. রাস্তা। ১৬ দশমিক পাঁচ কি.মি. বাঁধ, ২০৬টি স্কুল ও মাদ্রাসা, পাঁচটি কলেজচার হাজার ৭৬৯টি নৌকা ও ট্রলার। মারা পড়েছে ১৭ হাজার ৪২৩টি গবাদি পশু। নষ্ট হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল ও আট হাজার ৮৮৯ হেক্টর চিংড়ির ঘের। সিডরের শোক কাটিয়ে উঠতে এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে এসেছেে এ অঞ্চলের লোকজন।  

বেড়িবাঁধের বেহাল দশা

বিধ্বস্ত এ জনপদের মানুষের দাবিতে এক পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে শরণখোলাবাসীকে। নামে টেকসই বেড়িবাঁধ বলা হলেও বাস্তব অবস্থাটা একেবারেই ভিন্ন। মাটির কাজ চললেও নদী শাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। ব্লক ডাম্পিং করে নদী শাসন না করেই নির্মাণ কাজ শুরু করায় চলতি মাসে গাবতলা এলাকায় তিন দফা বাঁধ ধসে পড়ছে।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে। চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রায় দুই বছরে বলেশ্বর ও ভোলানদী বেষ্টিত শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৬৫ কিলোমিটার বাঁধের প্রায় ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমনটা দাবি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে টেকসই বাঁধের নামে প্রহসন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, ‘আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে আশা করি। এক কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন না করলে বাঁধ টিকবে না । সে কারণে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন উল হাসান বলেন, ‘শরণখোলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় বাঁধ ধসে যাচ্ছে। নদী শাসন ছাড়া বাঁধ টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।’