দিনাজপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়

এসিল্যান্ডের বরখাস্ত চান ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা

দিনাজপুরদিনাজপুরের বীরগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক আইনজীবীকে জরিমানা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সহকর্মীরা। এই ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায় ও তহশিলদার মহিবুল ইসলামের বরখাস্ত দাবি করেছেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা এ দাবি জানান।

আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. সামসুর রহমান পারভেজ বলেন, ‘এসিল্যান্ড যা করেছেন, তা তিনি করতে পারেন না। তাই আমরা চাই তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। যদি প্রশাসন এ দাবি মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট করার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

সংগঠনের সভাপতি অ্যাড. খতিব উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতিবাদ সভায় অনেকেই বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন। তবে এগুলোর মধ্যে কোন কোন দাবি গ্রহণ করা হবে তা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাড. খতিব উদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম খোকন, সাবেক সভাপতি অ্যাড. ইউসুফ আলী প্রমুখ।

এ বিষয়ে দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি অ্যাড. মিন্টু কুমার পাল জানান, হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা স্থগিত রাখার। তারপরও এসিল্যান্ড যা করেছেন তা ক্ষমতার অপব্যবহারের সামিল। ইতিমধ্যেই এসিল্যান্ডকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। তবে তার চাকরির ক্ষতি হোক এটি কাম্য নয়। যেহেতু এসিল্যান্ড জেলা প্রশাসকের অধীনে তাই আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার কথা বলেন তিনি।

এদিকে, ওই এসিল্যান্ডকে কর্মস্থল থেকে বদলি করা হলেও তা নিয়মিত বদলি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, এসিল্যান্ডকে বদলি করা হয়েছে এবং এটি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে নিয়মিত বদলি।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বীরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়ের আদালতে একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় যুক্তিতর্কে (শুনানি) লিপ্ত হন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য নিরদ বিহারী। একপর্যায়ে এসিল্যান্ড বিরোদা রানী রায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আইনজীবী নিরদ বিহারীকে এজলাস ত্যাগ করার আদেশ দেন। এই আদেশের প্রতিবাদ করায় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় এসিল্যান্ড  ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আইনজীবী নিরোদ বিহারীকে ৫০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে একদিনের কারাদণ্ড দেন। আইনজীবী তাৎক্ষণিক জরিমানা দিয়ে রশিদ গ্রহণ করেন।

এরপর বিষয়টি জেলা আইনজীবী সমিতিকে জানান অ্যাড. নিরোদ বিহারী। এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতি জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানীকে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার তাৎক্ষণিক এসিল্যান্ড বিরোদা রানী রায়কে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় বদলি করেন।

এদিকে আদালতে জরিমানার টাকা বুঝিয়ে দেওয়ায় অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া এবং ভবিষ্যতে ওই আইনজীবীর সনদ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে অ্যাড. নিরোদ বিহারী জানান, যদি টাকা বুঝিয়ে না দেওয়া হতো তাহলে তাকে কারাগারে যেতে হতো। এতে করে অনেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারতো। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই জরিমানা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এই আইনজীবী। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।