স্থানীয়রা জানান, রাতভর শিশির পড়ছে। ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ দেখা যাচ্ছে না। ফলে মাঘের এই হাড় কাঁপানো তীব্র ঠাণ্ডা কাহিল করে ফেলেছে গাইবান্ধাবাসীকে। শুধু মানুষ নয়, প্রাণীকুলও কাঁপছে। তবে শীতের দাপটে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কাতর হয়ে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলসহ সাত উপজেলার হতদরিদ্র-ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষরা। গরম কাপড়ের অভাবে এসব মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সাময়িকভাবে শীত নিবারণে খড়কুটোর আগুনই যেন তাদের একমাত্র ভরসা। তবে রাতের বেলায় বৃষ্টির মতো পড়তে থাকা কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে তাদের কষ্ট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ।
এছাড়া শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোয় ভিড় করছে অনেক মানুষ। এসব রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।
এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন আব্দুস শুকুর বলেন, ‘শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু ছাড়া আর কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ ক ম রুহুল আমীন জানান, শীতের প্রকোপ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৭০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরিভাবে আরো ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে।
তবে স্থানীয়রা জানান, সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই তীব্র শীতে কষ্ট আর দুর্ভোগে থাকা চরাঞ্চলসহ জেলার প্রায় ৫ লাখ হতদরিদ্র মানুষ এখনও কোনও শীতবস্ত্র পাননি। সরকারি-বেসরকারি ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে তাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই। এ কারণে জেলার তাপমাত্রা কত তা জানা সম্ভব নয়। তবে জেলার তাপমাত্রা যদি রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রার মতিই আরও কমতে থাকে তাহলে ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি অবস্থা হবে বলেই মনে করছেন গাইবান্ধার মানুষেরা।