বেনাপোলে আমদানি-রফতানিতে গতি আনতে ফোল্ডার পদ্ধতি চালু

বেনাপোল স্থলবন্দরআমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি আনয়ন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউসে প্রথমবারের মতো নথি প্রথা বিলুপ্ত করে ফোল্ডার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ফলে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

দ্রুত ও সহজে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে ফোল্ডার পদ্ধতি চালু করা হয়।

এ ব্যাপারে শুল্কায়ন গ্রুপের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় কাষ্টমস হাউসে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. বেলাল হোসাইন চৌধুরী। তিনি কর্মশালায় ফোল্ডার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেন।

ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। এ ব্যবস্থা চালুর কারণে একদিকে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে তাদের মালামাল খালাস করতে পারবেন। অন্যদিকে, রাজস্ব আহরণের কাজ দ্রুততর হবে এবং রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বাড়বে।

জানা গেছে, বেনাপোলে আমদানি চালান শুল্কায়ন নথির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হতো। এতে শুল্কায়নে বেশি সময় লেগে যেত এবং পণ্য খালাসে বিলম্ব হতো। ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে নথির পাশাপাশি প্রযোজ্য ও অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ফোল্ডারের মাধ্যমে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন  হবে। এ ব্যবস্থায় আমদানি-রফতানি চালান শুল্কায়নের সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার, শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাসসহ আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতাসহ কাস্টম হাউসের সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যবান্ধব ও জনবান্ধব শুল্কায়ন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. বেলাল হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। ফোল্ডার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতাভুক্ত চালান রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী বা ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে শুল্কায়িত হবে। এরমধ্যে  রয়েছে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানি করা পণ্য চালান, আমদানি করা চাল, গম, তুলা, পাম্প, ক্লিংকার, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, পান, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, তাজা ফুল, লিকুইড গ্যাস প্রভৃতি। আইআরসির মাধ্যমে আমদানি করা নমুনা পণ্যের চালান সব রফতানি পণ্যচালান বন্ডের আওতায় আমদানি করা পণ্য চালান আমদানি করা সব প্রকার চেসিস কমিশনার নির্ধারিত নির্দিষ্ট শ্রেণির পণ্য চালানও শুল্কায়িত হবে।

রাজস্ব আহরণের গতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বৈধ বাণিজ্যে সহায়তাকরণ, অপবাণিজ্য প্রতিরোধ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গত একমাসে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। চলমান সংস্কার ও উদ্ভাবনা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ী ও অংশীজনের সহায়তা চেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘এতদিন ফাইল ব্যবস্থা থাকার কারণে আমদানি-রফতানিকারকদের একটি ফাইল কমিশনার পর্যন্ত আসতে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেত। এখন ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে কমিশনারের টেবিল পর্যন্ত একটি ফাইল আসতে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। অন্যদিকে বাড়বে রাজস্ব আয় ও দ্রুত পণ্য খালাস।’

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, কাস্টমস কমিশনারের এ ধরনের পদক্ষেপে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস সম্ভব হবে। এটি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।