শীতে পানের বরজে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ, বিপাকে কৃষক

শুকিয়ে যাচ্ছে বরজের পান

লাগাতার শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে দিনাজপুরের হিলিতে পান গাছে বিভিন্ন  রকমের পচন রোগ দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান- পানের পাতাপচা ও পান গাছের গোড়াপচা রোগসহ নানা ধরনের রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ছে পানের বরজে। কুয়াশার কারণে পান গাছের পাতায় কালো দাগ ও হলুদ রঙ ধরেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে পানপাতা। সেই সঙ্গে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পান। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে পান গাছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এসব পান বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন পান চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শষ্যভাণ্ডার খ্যাত দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় মূলত আমন ও বোরা ধানের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি পান চাষ লাভজনক হওয়ায় হাকিমপুর উপজেলার কৃষকরা পান চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলির ঘাসুরিয়া, মংলা, নন্দিপুর, বালুপাড়া আর মাধবপাড়া গ্রামজুড়েই পানের চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক পানের বরজ। উপজেলায় এ মৌসুমে ২৮ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে।

কালো দাগ পড়ছে পানে

ঘাসুড়িয়া গ্রামের পানচাষি আব্দুর জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে পানের বরজ করেছিলাম কিন্তু তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে পান গাছে রোগ বালাই হয়ে পুরো পানের বরজ শেষ হয়ে গেছে। বন্যায় একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও পানের বরজ ঠিক করলাম, সেই ধকলই এখনও কেটে উঠতে পারিনি, এর ওপর এবারে শীতে আমাদের পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো। শুধু মাচান দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

পানচাষি মামুন হোসেন জানান, ‘পান ক্ষেতে নানা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কোনও ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। গাছ থেকে পান ঝরে পড়ছে, পান পুড়ে যাচ্ছে। আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেলো। বিশেষ করে গত ১৫ থেকে ২০ দিনে এই ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে।’

পচে যাচ্ছে পানের পাতা ও পান গাছের গোড়া

আরেকজন পানচাষি আবুল কালাম জানান, ‘এবছরে পান চাষে আমাদের দুই দফা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো। বন্যার কারণে প্রায় এক থেকে দেড়শ’ বিঘা জমির পানের বরজের মধ্যে পানি উঠে গিয়ে বরজের ক্ষতি হয়। এখন আবার শীত ও কুয়াশার কারণে গাছ থেকে পান ঝরে পড়ছে। ঠাণ্ডার কারণে পানের গাছ একবারে মরে যাচ্ছে।’

ঝরে পড়ছে পান

এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা নাজনীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে পানে সাধারনত ছত্রাকজনিত সমস্যা হয়; যেমন: পানে দাগ পড়ে ও গোড়াপচা রোগ হয়। এবার বেশি কুয়াশা ও শীত হওয়ার কারণে হাকিমপুর উপজেলাতেও পান গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেওয়ায় গাছ থেকে পান পাতা ঝড়ে পড়ছে। কিছু ছত্রাকজনিত কালো দাগ হচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কার্বোন ড্রাইজিন অথবা ম্যানকোজিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করলে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।