বিসিসির মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে বসেননি আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনবকেয়া বেতনের দাবিতে গত রবিবার থেকে অব্যাহত রয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি। আন্দোলনের পঞ্চম দিনে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে মেয়রের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা এতে সাড়া দেননি।

আন্দোলনকারীরা জানান, ৬ মাস ধরে পাঁচ শতাধিক নিয়মিত এবং চার মাস ধরে এক হাজার ৪০০ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ২২টির মতো প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আটকে রয়েছে।

তারা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মবিরতি পালন করছেন এবং নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কক্ষের সামনে বসে স্লোগান দেন। সমাবেশও করছেন তারা। মেয়রসহ অন্য কর্মকর্তাদের নগর ভবনে আসতে বাধা দেওয়ায় বাকি সময়ও কোনও কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে। পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও পরিশোধ করে আসছি। তারপরও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে গেছেন, এখন আলোচনায় বসতে চাইলেও বসছেন না। এই নগরের মানুষের সেবার বিনিময়েই করপোরেশন আয় করে থাকে, সেটা তাদের মাথায় থাকতে হবে। কী আয়, কী ব্যয় হচ্ছে তা তো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবই জানেন। তাই আয় বাড়াতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমাকে সহায়তা করতে হবে।’

বিসিসি মেয়র আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন স্কেল বাড়লেও, সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ছে না। আয় বাড়াতে এরইমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে নগরের বহুতল নতুন ভবনগুলোর কর আদায়, ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর ফ্ল্যাট অনুযায়ী হোল্ডিং নম্বর নির্ধারণ, শাখা সড়কগুলোসহ নগরের সব দোকানপাটের সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সের আওতাভুক্ত করা ইত্যাদি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগরবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত দ্রুত সেবা দিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। কিছু মানুষের দুর্নীতির কারণে করপোরেশনের কাঙ্ক্ষিত আয় এর আগেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই সেখানেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নানা অনিয়মে জড়িত থাকায় কর শাখার মুশফিক আহসান আজমসহ অনেককেই বদলি করা হয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘চলমান আন্দোলনের কারণে ৬টির মতো নতুন প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়াসহ নগরবাসী নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন।’

করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, ‘বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আমরা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের কেউ বসতে চাচ্ছেন, আবার কেউ চাচ্ছেন না। বৈঠকে না বসলে এর সমাধান কীভাবে হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না।’

এদিকে, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের নগর ভবন শাখার সম্পাদক দীপক লাল মৃধা বলেন, ‘গত বছর এপ্রিল মাসে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নামার পরে মেয়র জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের কথা ছিল কিন্তু তা হয়নি। বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন দিয়ে দেওয়া হলে, আর নতুন করে বৈঠকের কী প্রয়োজন? আর যদি বৈঠক করতে হয় তবে আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতবারের বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে ডাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি আন্দোলনকারীরা করে না। যারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠজন, তারাই দুর্নীতি করছে। করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সনদ জাল বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কয়েকমাস আগে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেয়রের যারা কাছের লোক তাদের তো বদলিও করা হয় না। কর্তৃপক্ষ শুধু ঠিকাদারদের বিলই পরিশোধ করে, আমাদের কথা ভাবে না।’

আন্দোলনকারীরা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের যে আয়, তা দিয়ে ভালোভাবেই স্টাফদের প্রতিনিয়িত বেতন দেওয়া সম্ভব।