বগুড়ায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

বগুড়াবগুড়ার শাজাহানপুরে কালুদাম গ্রামে আরএসএফ মডেল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির আবাসিক ছাত্র রোমান সরদারের (৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্কুলের হোস্টেলের সুপার কামরুল হুদা দাবি করেছেন, রোমান বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে গলায় তোয়ালের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে তিনি এ শিশুর আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

শিক্ষকদের অসংলগ্ন কথায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না সে আত্মহত্যা করতে পারে। সকলের বিশ্বাস অজ্ঞাত কোন কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। সিলিমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবদুল আজিজ বলেছেন, হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে রোমান আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ব্যাপারে সদর থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ ও অন্যরা জানান, বগুড়া সদরের নামুজা ইউনিয়নের পাল্লাপাড়ার কারখানা শ্রমিক মিলন সরদারের ছেলে রোমান সরদার পার্শ্ববর্তী শাজাহানপুর উপজেলার কালুদাম গ্রামে আরএসএফ মডেল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীর আবাসিক ছাত্র ছিল। শুক্রবার বিকালের দিকে শিক্ষক-কর্মচারিরা অচেতন অবস্থায় রোমানকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ফোনে অভিভাবকদের জানান, রোমান আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

স্কুলের কর্মচারী নুর হাবিব জানান, শনিবার স্কুলের অভিভাবক সমাবেশ ছিল। শুক্রবার বিকালে তিনি দেখতে পান কয়েকজন শিক্ষক ছাত্র রোমানকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন তিনি ও গার্ড মেহেদুল ইসলাম তাদের সাথে হাসপাতালে যান। চিকিৎসক রোমানকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষকরা লাশ রেখে চলে যান।

বগুড়া সদরের নামুজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল মামুন জানান, মেধাবী শিশু রোমান আত্মহত্যা করতে পারে না। তিনি বলেন, আত্মহত্যার পর যেসব লক্ষণ থাকা দরকার তার কিছুই ছিল না। স্কুলের শিক্ষকরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। তার বিশ্বাস অজ্ঞাত কোন কারণে স্কুলের কেউ তাকে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারাও তার কাছে একই সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন দাবি করেন। শিশুর বাবা মিলন সরদার ও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রোমান কখনও আত্মহত্যা করতে পারেনা। তাদের বিশ্বাস শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কর্মচারী জানান, রোমান সরদার খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। স্কুলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রোমানের কাছে অন্য শিক্ষার্থী, হোস্টেলের পরিবেশ ও থাকা-খাওয়া সম্পর্কে তথ্য নিতেন। এতে হোস্টেলের সাথে সংশ্লিষ্টরা রোমানের উপর নাখোশ ছিল। তাদের ধারণা, এ ক্ষোভ থেকেও তাকে হত্যা করা হতে পারে। আবার কেউ বলেছেন, শিশুটি বলাৎকারের শিকার হয়েছিল। এ ঘটনা চাপা দিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

হোস্টেল সুপার কামরুল হুদা দাবি করেছেন, রোমান সবসময় উদাসীন থাকতো। তিনিও দাবি করেন, সে আত্মহত্যা করেছে।