সম্প্রতি বনের অভ্যন্তরে নানা রকম দুর্ঘটনা, অপরাধ বেড়ে যাওয়া এবং সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা হওয়ায় এ মৌসুমে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে এসেছিল বনবিভাগ। সুন্দরবন বিভাগের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু শেষমেষ সুন্দরবনের উদ্ভিদ জাতীয় বনজ সম্পদ গোলপাতার ঝাড় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় এ পাতা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এবার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে তিন হাজার ৭০০ এবং শ্যালা রেঞ্জে চার হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন গোলপাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অনেক কম। এবার এ খাতে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে না বললেই চলে। কিন্তু তাতে বনবিভাগের কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে সুন্দরবন উপকূলের শরনখোলা উপজেলার জামাল শরীফ, মোংলার আসলাম সর্দার, বরগুনার লিয়াকত ও পাথরঘাটার হাওলাদার রবিনসহ একাধিক বাওয়ালি জানান, সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী ও খালের চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গোলগাছ জন্মে। আর এ সিজনাল পাতা কাটার মৌসুম ডিসেম্বরে শুরু হয়ে মার্চে শেষ হয়। কিন্তু বনবিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার পর এবার দেরিতে গোলপাতা কাটার পাস দেওয়া হয় বাওয়ালিদের।
তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও সুন্দরবনে গোলপাতা কাটার জন্য বাওয়ালিরা নৌকা ও লোকবল ঠিক করেন। একইসঙ্গে তারা ব্যাংক লোনও নেন। কিন্তু হঠাৎ করে কোনও রকম নোটিশ ছাড়া মৌসুমের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ থেকে গোলপাতা কাটার অনুমতি স্থগিত করে বনবিভাগ।
নৌকার মাপও ছোট করে দেওয়া হয়েছে। ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য মাপের নৌকা থাকলেও এবার করা হয়েছে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য। তাতে গোলপাতা ধরবে ২০০ মণ। এর আগে প্রতি নৌকায় ৫০০ মণের মতো গোলপাতা আহরণ করা যেত বলে বাওয়ালিরা জানান।
তারা আরও জানান, বনদস্যুদের উৎপাত, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে গোলপাতা আহরণের সঙ্গে জড়িত বাওয়ালি ও ব্যবসায়ীদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে। তার ওপর আবার বনবিভাগের কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রতিবছর সুন্দরবন উপকুলের শরনখোলা, মোংলা, বাগেরহাট, ভান্ডারিয়া, মোড়েলগঞ্জ, তেতুলিয়া ও ঢাংমারী এলাকায় গোলপাতা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এবার সীমিত করা হয়েছে।
বনের অভ্যন্তরে নানা রকম দুর্ঘটনা, অপরাধ বেড়ে যাওয়া এবং সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা অভায়রণ্য ঘোষণা হওয়ায় এবার গোলপাতা কাটা সীমিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় না হলেও কিছু করার নেই। তারপরও উপকূলের অন্তত ৩০ হাজার জেলে-বাওয়ালিদের পরিবারের কথা চিন্তা করে এবার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে শর্তসাপেক্ষে গোলপাতা কাটার অনুমতি দিয়েছে বনবিভাগ।