চেতনানাশক খাইয়ে শিশু ‘ধর্ষণ’, ২০ হাজার টাকায় রফা!

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভায় চেতনানাশক খাইয়ে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পর পর দুইদিন ‘ধর্ষণের’ ঘটনা ২০ হাজার টাকায় রফার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ ও ৩ মে ঘটা এই ঘটনাটি ৪ মে কাজল মিয়া নামের এক স্থানীয় কাউন্সিলর ‘মামলা করে ফায়দা হবে না’ জানিয়ে ২০ হাজার টাকায় রফা করেন। এ ঘটনায় অসুস্থ শিশুটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে আজ বুধবার (১৬ মে) দুপুরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ এবং রাতে শিশুর বাবা থানায় মামলা দায়ের করেন। চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজমিরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘পৌর এলাকার নতুন বাজারের মৃত শিরু মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (৩৭) গত ২ ও ৩ মে পর পর দুই দিন শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ৪ মে ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজল মিয়া শিশুটির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বলেন।’

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও পুলিশ জানায়, শিশুটির পরিবার হত-দরিদ্র। হাওর এলাকায় দিন-মজুরি করে তাদের সংসার চলে। প্রতিদিনের মতো গত ২ মে শিশুটিকে বাড়িতে একা রেখে বাবা-মা হাওরে কাজে যায়। এই সুযোগে উজ্জ্বল মিয়া শিশুর বাড়িতে আসে এবং শিশুটিকে চেতনানাশক মিশ্রিত জুস দেয়। শিশুটি জুস খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ‘ধর্ষণ’ করে উজ্জ্বল মিয়া। শিশুটি পরদিনও একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়।

বাবা-মা জানান, ৩ মে শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে আগের ঘটনাগুলো তাদের কাছে খুলে বলে শিশুটি। এরপর ঘটনাটি স্থানীয়রাও জেনে যান। পরে ৪ মে কাউন্সিলর কাজল মিয়া সালিশ ডেকে ২০ হাজার টাকা তাদের হাতে দিয়ে ঘটনার কথা ভুলে যেতে বলেন।

ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সংগঠক অন্নিকা দাশ বলেন, ‘অসুস্থ শিশুটির চিকিৎসা না করানোয় আজ তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি শিশুটির বাড়ি যাই। এসময় চুনারুঘাট থানা থেকে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

অন্নিকা দাশ আরও বলেন, ‘উজ্জ্বল মিয়া খুবই ঝামেলাবাজ। স্থানীয়রা তাকে ভয় পান। সে তিন বিয়ে করেছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, স্বভাব-চরিত্র ঠিক না হওয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় বউ তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়।’

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজল মিয়া বলেন, ‘মেয়ের পরিবার দরিদ্র। মামলা দিয়ে তারা কোনও ফায়দা পাবে না বলেই আমি ঘটনাটা সালিশে মীমাংসা করি। উজ্জ্বল মিয়ার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে তা শিশুটির চিকিৎসার জন্য তার বাবা-মাকে দিয়েছি।’

ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘ভিকটিমকে উদ্ধার করে মেডিক্যাল করানোর জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার রাতে শিশুর পিতা বাদী হয়ে উজ্জ্বল মিয়াকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামি উজ্জ্বল মিয়া পলাতক। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে উজ্জ্বল মিয়াকে গ্রেফতার করতে পারবো।’