২৭নং ওয়ার্ডে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান সরকারের নির্বাচনি এজেন্ট সাব্বির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনি কেন্দ্রে এজন্টে হিসেবে থাকা যাবে কিনা জানি না। এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনও ধরনের ভয়ভীতি বা হুমকি-ধমকি পাওয়া যায়নি। তবে ভোটের আগের দিন রাতে এরকম হুমকির আশঙ্কা করছি।’ একই কথা বলেন একই ওয়ার্ডের নির্বাচনি এজেন্ট রিফাত ও আব্দুল্লাহ।
এই ওয়ার্ডের হাসান সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনি এজেন্ট সিলেক্ট করেছি। আমাদের কোণঠাসা করতে পারলেই বিএনপির নির্বাচনি কার্যক্রম ভেস্তে যাবে। তারা এলাকায় প্রচার দিচ্ছে ভোটের দিন নির্বাচনি বুথ করতে দেবে না। ভোটার নির্দেশনা বা স্লিপ দেওয়ার জন্য শামিয়ানা করতে দেবে না।’
২৮নং ওয়ার্ডে বিএনপর নির্বাচনি এজেন্ট রোখসানা আক্তার বলেন, ‘ভোটের দিন কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দিলে কার কাছে কী বলব? আর বলেইবা কী হবে?’
লক্ষ্মীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির নির্বাচন সমন্বয়কারী জাকির হোসেন মাতব্বর বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনও হুমকি ধমকি দেয়নি। তবে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নির্বাচনি স্লিপ দেওয়া বা স্লিপ দেওয়ার জন্য কোনও ধরনের সহায়তা কেন্দ্র করার ব্যাপারে হুমকি পাওয়া গেছে। ভোটের দিন সকালে বা আগের রাতে তাদের এ হুমকিগুলো বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে বলে শঙ্কিত রয়েছি।’
২৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নির্বাচন সমন্বয়কারী অব্দুর রশীদ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ আমার বাড়ির পাশে গিয়ে এলাকার লোকজনকে আমার অবস্থান বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ভোটের দুই দিন আগে প্রশাসনের এরকম আচরণ আমাকে শঙ্কিত করেছে। আমাকে খোঁজাখুঁজি করায় আমার নির্বাচনি এজেন্ট ও কর্মীরা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত পরশু দিন মহানগরের ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণার মাইক নিয়ে গেছে। সেই মাইক এখনও পাইনি। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েও মাইক ফেরত পাইনি। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কোনাবাড়ী এলাকার নির্বাচনি কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক সেলিম হোসেন, সদস্য শাহাদাত হোসেন, সদস্য আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিবি পুলিশ যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। যে মুহূর্তে নির্বাচনি এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ও তাদের ভোটকেন্দ্রের কাজ বণ্টন করা হবে, সেই মুহূর্তে পুলিশ প্রশাসনের হুমকি-ধমকি আরও বেড়ে গেলো।’
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ২৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন শেখ বলেন, ‘নির্বাচন এলে বিএনপির লোকজন অনেক কিছুই বলে। তারা শুধু আশঙ্কার কথাই বলে, যার বাস্তবতার সঙ্গে কোনও মিল নেই। তারা পরিবেশ ঘোলাটে করার জন্য শুধু অপপ্রচার দিতে জানে।’
২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্ট কমল সরকার বলেন, ‘নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবাই সহাবস্থানে রয়েছে। ওয়ার্ডের কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।’
অপর নির্বাচনি এজেন্ট শিপন বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনি কর্মীরা আজকালও খুব শান্তিপূর্ণভাবে তাদের পোস্টার সাঁটানো, লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালাচ্ছে। এখানে আশঙ্কার কিছু নেই। তারা উদ্ভট অভিযোগ ও শঙ্কা প্রকাশ করছে।’
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আমীর হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগগুলোর কোনও ভিত্তি নেই।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে সুনির্দিষ্ট যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সেসব বিষয় নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। সেই অনুযায়ী সমাধানও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ যেন কাউকে বিনা কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি না করে সেজন্য শনিবারও (২৩ জুন) পুলিশ সুপারকে বলেছি। যেন কাউকে কোনও ধরনের হয়রানি না করা হয়।’
এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ শনিবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা শনিবার আমার সঙ্গে কোনও কথা বলেননি বা তিনি আমাকে কোনও চিঠিপত্রও দেননি। আর বিএনপি প্রার্থীর লোকজন পুলিশের ব্যাপারে যেসব কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। আমার পুলিশ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কারও বাড়িতে যায়নি বা কাউকে খুঁজতেও যায়নি।’
আরও পড়ুন-
গাজীপুরে আ.লীগের উন্নয়নের আশ্বাস, বিএনপি চায় সহমর্মিতা
‘নৌকার প্রচার দেখা যায়, ধানের শীষের শোনা যায়’
গাজীপুরে ৭৯ ভাগ কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে নির্বাচনি প্রচার, মহানগর ছাড়তে হবে বহিরাগতদের