উন্নয়ন ও নিরাপত্তা দেখভালের প্রতিশ্রুতি সিলেটের ৭ মেয়রপ্রার্থীর

জনগণের মুখোমুখি সিলেটের ৭ মেয়রপ্রার্থী (ছবি- প্রতিনিধি)

আধুনিক মহানগর গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। এ ছাড়া, বাকি পাঁচ মেয়র পদপ্রার্থী উন্নয়ন ও নগরবাসীর নিরাপত্তা দেখভালের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা, নগরের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরি স্থাপন এবং বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১১ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরীর রিকাবীবাজারে মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে আয়োজিত জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে সাত মেয়র পদপ্রার্থী এসব কথা বলেন। অবাধ, নিরপক্ষে ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই –এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিপিবি-বাসদের মেয়রপ্রার্থী আবু জাফর, স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী এহসানুল হক তাহের, নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম।

সুজনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ। অনুষ্ঠান চলাকালে ভোটাররা সাত মেয়রপ্রার্থীকে সিলেট নগরের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

অনুষ্ঠানে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য যা যা করার কথা ছিল, আমি তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ, নির্বাচিত হওয়ার পর পরই আমাকে তিন বছর জেলে থাকতে হয়েছে। তারপরও আমি অনেক কাজ করেছি, যা দৃশ্যমান। এখন আমার স্বপ্ন, আধুনিক সিলেট মহানগর গড়ার।’ এসময় সিলেট সিটিতে ভোট কারচুপির চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘একজন মেয়রের কাজ কেবল রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ নয়, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও তার কাজ। একজন মানুষ সকালে কাজে বের হয়ে রাতে যাতে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে, সেদিকটা নিশ্চিত করাও মেয়রের কাজ। আমি নির্বাচিত হলে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা রোগী আর ভোটাররা ডাক্তার হয়ে যান। আবার নির্বাচন শেষে ভোটাররা রোগী ও নির্বাচিতরা ডাক্তার হয়ে যান। এটা ঠিক নয়।’ এসময় সিলেট সিটিতে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিপিবি-বাসদের মেয়রপ্রার্থী আবু জাফর বলেন, ‘এই মহানগরীর মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু অতীতে মেয়ররা সিলেটের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণ, যুব সমাজের বিপথে যাওয়া রোধ করে একটি আধুনিক সিলেট গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া, মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় আধুনিক লাইব্রেরি গড়ে তুলবো। অসহায় ও গরিবদের বিয়ের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি কমিউনিটি সেন্টার চালু করবো। এই নগরীকে সবুজের নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার অন্যতম কাজ।’ 

জামায়াতের মেয়রপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেটকে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তুলবো। সিলেটে অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান এক হয়ে কাজ করে না। আমি নির্বাচিত হলে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করে সিলেটের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাব। এ ছাড়া, এ অঞ্চলের বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবো এবং স্বল্প আয়ের মানুষকে কাজে লাগিয়ে সিলেটকে আরও এগিয়ে নেবো।’

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমি ৩৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবার এই বিএনপিই আমাকে কুরবানি করেছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার জন্য আমাকে নানাভাবে আঘাত করেছে। তবু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমি আমাকে উজার করে দিতে চাই। সাবেক দুই মেয়র সিলেটের উন্নয়নের জন্য তেমন কোনও কাজ করেননি।’ এসময় নির্বাচিত হলে সিলেটকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ‘সিলেটের মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে আমি প্রতিটি মসজিদে আরবি বিষয়ের ওপর লেখাপড়ার ব্যবস্থা করবো। এ ছাড়া, যারা মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাদের সিটি করপোরেশন থেকে মাসোহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। শিশু ও নারীদের বিনোদনকেন্দ্রের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাকেন্দ্রে গড়ে তুলবো।’