'এখন আর কারও কাছে তনু হত্যার বিচার চাইতে ইচ্ছে করে না'

তনু হত্যাকাণ্ডকুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ২৮ মাস হলো আজ (২০ জুলাই)। তবে এখনও মামলায় উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ করেছেন তনুর পরিবারের সদস্যরা। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার নিরপরাধ মেয়েটার হত্যার কথা মনে হলে এখনও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। এখন আর কারও কাছে আমার সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে ইচ্ছে করে না। বিচার চাইতে গেলে নিজেদেরই অপরাধী মনে হয়।’

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন আর তনু হত্যা মামলার কোনও তদন্ত কর্মকর্তা খোঁজ নেয় না। শুধু সাংবাদিকদের প্রয়োজন হলে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেন।’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা শুধু এখন বসে বসে তনু হত্যাকাণ্ডের মাস গুনি। কোথাও কোনও আশার বাণী শুনতে পাই না। মেয়ের শোকে তার বাবা আর আমি খুব অসুস্থ। দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বিচার চেয়েছি। মেয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। দুই বছর তিন মাস হচ্ছে। এখনও বিচারে কোনও আলোর মুখ দেখিনি।’

আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছি সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারী কে তা বেরিয়ে আসবে। কারণ, সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। দেখছি দেখছি বলে সিআইডি ২৮ মাস পার করেছে। আমরা এখন বসে তনু হত্যার মাস গুনি।’

তনু হত্যা মামলায় গতি আনার দাবি জানিয়ে কুমিল্লার নারী নেত্রী মায়মুনা আক্তার রুবী বলেন, ‘তনুকে একটি সুরক্ষিত স্থানে হত্যা করা হয়েছে। ২৮ মাসেও কোনও আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’তনুর বাবা-মায়ের আহাজারি (ফাইল ছবি)

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লা’র সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘আইনের গতি এত প্রলম্বিত হলে সঠিক বিচার নিয়ে মানুষের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনেও তনুর হত্যার কোনও ক্লু উদ্ধার না হওয়া দুঃখজনক।’

তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সন্দেভাজন কয়েকজনের ডিএনএ রিপোর্ট চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাইনি। ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে আনতে হয়। তাই সময় লাগছে। আশা করছি দ্রুত রিপোর্ট হাতে পাবো। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই তদন্তের পর্বটা কমিয়ে আনা যাবে।’

আরও পড়ুন- তনু হত্যাকাণ্ড: দুই বছরেও কোনও আসামি ধরা পড়েনি