স্কুলে পরীক্ষার হলে সন্ত্রাসী হামলা, শিক্ষকসহ আহত ১০

হাসপাতালে ভর্তি আহত দুই শিক্ষার্থীজামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচনি (টেস্ট) পরীক্ষা চলার সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় তিন শিক্ষক ও সাত পরীক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনি পরীক্ষা চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিজের ছেলের সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্বের জের ধরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু সন্ত্রাসীরে নিয়ে এই হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। 

কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষার ২ নং কক্ষে কর্তব্যরত সহকারী ইংরেজী শিক্ষক আলেয়া খাতুন জানান, সোমবার পরীক্ষা চলাকালীন কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার্থী রমজান পাশে দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষার্থী শহীদের বেঞ্চে পা তুলে দেয়। শহীদ বাধা দিলে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। এর জের ধরে মঙ্গলবার সকালে দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থী শহীদ, সোহাগ, মামুনুর রশীদসহ কয়েকজন একসঙ্গে স্কুলে যাওয়ার সময় কুঠিরহাট খোলা ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা রমজান, তার সহপাঠী বাদশা ও আরও কয়েকজন বন্ধু হামলা চালায়। আহত অবস্থায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কৃষি বিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদিকে বাদশার বাবা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আবার ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তারা পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নপত্র ছিঁড়ে ফেলে। এসময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) আজহারুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) তামানুর ইসলামসহ অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা বাধা দিতে গেলে তাদেরও মারপিট করা হয়।

গুরুতর আহত শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ ও সোহাগকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পরীক্ষার্থী শহীদ, শাকিল, আবু বকর সিদ্দিক, রাজু এবং ইংরেজী বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা আলেয়া খাতুন, সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তামানুর ইসলামকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাড়ি ডোয়াইল ইউনিয়নের চর বালিয়া বলে এলাকাবাসী জানায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। সংবাদ পেয়ে সরিষাবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শহীদের পিতা ভাজেন আলী এবং মাতা সূর্য ভানু স্কুল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে পুত্র এবং তার বন্ধুদের উপর সস্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন।

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজেদুর রহমান জানান, ‘উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’

আহত পরীক্ষার্থী শহীদের বাবা ভাজেন আলী ও মা সূর্য ভানু স্কুলে এসে তাদের ছেলে ও তার বন্ধুদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন।

কুঠিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত এই বিচার হওয়া উচিত।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আনোয়ার ইসলাম বুলুর নেতৃত্বে পরীক্ষা হলে বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের পরীক্ষা হলে হামলার বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বুলুর মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হামলাকারীদের দ্রুত আটক করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরিষাবাড়ি থানার ওসিকে বলা হয়েছে।’