বয়লার বিস্ফোরণে কলেজছাত্রী নিহত, ২ শ্রমিক দগ্ধ

গাইবান্ধা জেলাগাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের পশ্চিমপাড়ায় একটি চালকলে (চাতাল) বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় শারমিন আকতার (১৮) নামে কলেজছাত্রী নিহত হয়েছে। এসময় ফুল মিয়া (৫০) ও উজ্জল মিয়া (২৫) নামে দুই শ্রমিক দগ্ধ হন। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে সাদুল্যাপুর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার রুপালি চালকলে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

নিহত শারমিন আকতার পশ্চিমপাড়ার শফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে জয়েনপুর আর্দশ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আহত ফুল মিয়া ও উজ্জল মিয়া সাদুল্যাপুরের পশ্চিমপাড়ার এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, সকালে চালকলের শ্রমিক ফুল মিয়া ও উজ্জল মিয়া বয়লারের চুলায় আগুন দেন। এরপর তারা চালকলটি চালু করার প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ করে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরিত হয়। এতে বয়লারসহ মিলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। মিলের কিছু অংশে আগুন ধরে ধোয়ার সৃষ্টি হয়। চালকলের ভেতরে (চাতাল) কাপড় পরিষ্কার করতে গিয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয় শারমিন। এসময় শ্রমিক ফুল মিয়া ও উজ্জল মিয়াও আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন দ্রুত শারমিন, ফুল মিয়া ও উজ্জলকে উদ্ধার করে সাদুল্যাপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারমিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গা দ্বগ্ধ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত ফুল মিয়া ও উজ্জল মিয়া সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এশরাফুল কবীর আরিফ জানান, ‘বিস্ফোরণের সময় প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের এলাকার মাটি কেঁপে ওঠে এবং যন্ত্রাংশ ছিটকে গিয়ে পাশের বাড়ির ঘরের টিনের চালের ওপরে পড়ে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, পশ্চিমপাড়ার জনবসতি এলাকায় কয়েক যুগ আগে চালকলটি স্থাপিত হয়। দীর্ঘদিনের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ এই মিলটি চালু রাখার অযোগ্য হয়ে গেলেও মালিক আলী হোসেন ও তার ছেলে রেজা মিয়া ঝুঁকি নিয়েই এটি চালু রেখেছেন।

সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা রাইসমিলটি অনেক পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণেই হয়তো এ বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া মিলটি জনবসতি এলাকায় হওয়ায় চালানোর মতো কোনও পরিবেশ নেই সেখানে। বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

এদিকে, এ ঘটনার খবর শোনার পর চাতাল মালিক আলী হোসেন হার্টঅ্যাটাকে হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানান তার ছেলে রেজা মিয়া। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যান তিনি। রেজা মিয়া জানান, তার বাবা চালকল (চাতাল) স্থাপন করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ থাকায় চাতালের ব্যবসা ছেড়ে দেন। এরপর থেকে তিনি নিজেই চাতালে ব্যবসা করে আসছেন। তার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চাতালে বয়লার বিস্ফোরণের খবর শোনার পরপরই তিনি হাসপাতালে মারা যান।