নীলফামারী সদরে প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াত-বিএনপি টানাটানি

নীলফামারী-২ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত থেকে প্রার্থী হতে চান যারা

নীলফামারী-২ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তার দল তো বটেই প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলীয় জোটের নেতাদেরও ধারণা এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনিই পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা ২০ দলীয় জোট থেকে কে যাচ্ছেন তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিক দল জামায়াতের দড়ি টানাটানি চলছে। আসনটিতে প্রার্থিতা নিয়ে জোটের এই দুই শরিক দল একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। যদিও পুরো বিষয়টিই এখন বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড ও ২০ দলীয় জোট নেতাদের টেবিলে।

এই আসনে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ভোটার রয়েছে ৩ লাখ আট হাজার ৮২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৭৯ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৫ জন।

আসনটিতে বিএনপির পক্ষে প্রার্থী হতে চেয়ে জোটের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) মো. সামসুজ্জামান এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল।

তবে এ আসনে জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী একক  প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির (এককভাবে) মনিরুজ্জামান মন্টুকে নির্ধারণ করে মনোনয়নের দাবিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি আসনটিতে জামায়াত বরাবর জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। এবারে তাই এবার জোটের পক্ষে বিএনপির প্রার্থীই দাবিদার হয়ে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে, জামায়াতের ওই নেতা (মনিরুজ্জামান) এবং নেতাকর্মীদের দাবি ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বরাবরই আসনটি জামায়াতের ছিল। পরাজিত হয়েছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে, এবারও ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতের প্রার্থীই নির্বাচন করবেন এই আসনে।

নীলফামারী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সেলিম ফারুক বলেন, ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে জামায়াতের তৎকালীন জেলা আমীর আব্দুল লতিফ নির্বাচন করে পরাজিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনেও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের মনিরুজ্জামান মন্টু নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ কারণে আসনটি উদ্ধারে আমরা এবার বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী দাবি করছি। তাদের দাবি, আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী দেওয়া হলে বিজয় নিশ্চিত হবে।

এদিকে, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মো. মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, ২০ দলীয় জোটে এ আসনে আমিই প্রার্থী হবো। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি নিশ্চিত হয়েছি। সে হিসেবে আইনসিদ্ধ উপায়ে একক  প্রচার প্রচারণাও চালাচ্ছি।

বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। সে হিসেবে কোনও পরিবর্তন আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যেহেতু আছি, সে হিসেবে ঐক্যজোটেও আছি। আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। এই আসনে জামায়াতের ভোট ব্যাংক আছে। নেতাকর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে।

নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে মন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, এবারে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করতে চাই। এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের সমস্যা হয়নি, দিন দিন নির্বাচনি পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এখানে মূলত সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের সঙ্গে আমার নির্বাচন হবে, তবে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতার এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সেলিম ফারুক বলেন, ‘যেখানে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনও মনোনয়ন চূড়ান্তই হয়নি, সেক্ষেত্রে কিভাবে জামায়াতের মনিরুজ্জামান মন্টু নিশ্চয়তা দিচ্ছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জোটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা নির্বাচনি মাঠে এগিয়ে যাবো।