রামগড় স্থলবন্দর: মামলা জটিলতায় আটকা ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া

রামগড় স্থলবন্দরবাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থলবন্দরের জন্য ফেনী নদীর ওপর নির্মিত হবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১। এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাংলাদেশ অংশে যাদের জমি নেওয়া হয়েছে তারা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না।  মামলা জটিলতায় আটকে আছে ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া। এতে হতাশার পাশাপাশি টাকা পাওয়া নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থলবন্দর ও সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির জন্য ২.৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মালিকানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকাও নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রশাসনের কাছে চলে এসেছে এবং বর্তমানে তা প্রশাসনের কাছে জমা রয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশের কারণে টাকা বিতরণ করা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় ভূমি মালিকেরা প্রশাসনকে দোষারোপ করছে। তবে প্রশাসনের দাবি, অধিগ্রহণ করা ভূমির মধ্যে জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক লোকের জায়গা না থাকলেও তিনি দাবি করেছেন তার জায়গা আছে। এজন্য তিনি হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন। হাইকোর্ট তার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে নিষেধ করেছেন।রামগড় স্থলবন্দর

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেনী নদীর ওপর খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম অংশে ১২৮ কোটি ৬৯ লাখ ভারতীয় মুদ্রা ব্যয়ে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কথা থাকলেও ভূমির মালিকানা সমস্যায় হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় আটকে আছে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। এতে করে বাংলাদেশ অংশে সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না ভূমির মালিকেরা। এতে হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে অধিগ্রহণ আতঙ্কে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে প্রস্তাবিত স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দাদের।

অধিগ্রহণকৃত ভূমির মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘রামগড় স্থলবন্দরের কাজ শুরু হয়ে গেছে। জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও টাকা পাইনি। প্রশাসনের অবহেলার কারণে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাছে। আমরা দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা চাই।’রামগড় স্থলবন্দর

ভূমির আরেক মালিক মোহাম্মদ বারেক বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়বে, যোগাযোগ বাড়বে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে রামগড় স্থলবন্দরের কাজ শুরু হয়েছে। মহৎ এই কর্মযজ্ঞে আমরা অংশীদার হতে চাই। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে ভিখারি হতে চাই না।’

ভূমির মালিক ফাতেমা বিবি বলেন, ‘অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে সন্তান নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাছে। আমরা অধিগ্রহণের টাকা পেলে জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করবো। ভবিষ্যত দিনগুলো ভালো ভাবে কাটানোর জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

ভূমির মালিক পারভীন আক্তার জানান, তাদের একমাত্র জমি অধিগ্রহণ করায় বিপাকে পড়েছে পুরো পরিবার। তবে তাতে সমস্যা নেই। অধিগ্রহণের ফলে যে টাকা পাবেন, তা দিয়ে আরও বেশি জায়গা কিনে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে পারবেন।রামগড় স্থলবন্দর

রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভূইঁয়া ফরহাদ বলেন, ‘রামগড় স্থলবন্দরের  কার্যক্রমে রামগড়ের স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিয়তার দাবি জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনও গাফিলতি নেই।’ তিনি বলেন, ‘স্থলবন্দর ও সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির জন্য ২.৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মালিকানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রশাসনের কাছে চলে এসেছে এবং বর্তমানে তা প্রশাসনের কাছে জমা থাকলেও আদালতের নির্দেশে বিতরণ করা যাচ্ছে না। জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক লোকের জায়গা না থাকলেও তিনি হাইকোর্টের আশ্রয় নিয়েছেন। মহামান্য হাইকোর্ট তার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে নিষেধ করেছেন, এ কারণে তা আটকে আছে। আদালতের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে।’