রাতের জনসভায় জমজমাট সুনামগঞ্জের ভোটের মাঠ

1

ভোটের আনন্দে শীতের কষ্ট ভুলে জেগে উঠছেন হাওরবাসী। হাওরে বোরো ধান রোপণের কার্যক্রম চলছে। তাই দিনের আলোতে শ্রমজীবী, কৃষক, জেলেসহ সবাই হাওরে কৃষিকাজ করেন। দিনের বেলায় প্রার্থীরা ভোটাদের দেখা পাওয়াই দায়। কারণ চাষবাস করাই খেটে খাওয়া মানুষের কাজে। অগ্রাহায়নের পড়ন্ত বিকেলে হাওর থেকে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফিরে এসে খাওয়অ শেষে সন্ধ্যায় চলে আসেন ভোটের ময়দানে। ছেলে-বুড়ো সবাই যোগ দেন ভোটের আনন্দ উৎসবে।

এদিকে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার মতো সময় নেই আর। তাই প্রার্থীরাও গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনি গণসংযোগের কাজ।

এবিষয়ে কথা হয় জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তর কামলাবাজ গ্রামের আনফর আলী (৬৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিনও হাওরে কামকাজ থাকে, তাই হেই সময় আমরা জনসভায় আইতাম পারি না। রাইতে সভায় আমরার লাইগা ভালা।’

2

পাশেই বসা ছিলেন মধ্যবয়সী তিওর আলী (৫৮)।  তিনিও এসেছেন সভা শুনতে। প্রার্থী বিজয়ী হলে খেটে খাওয়া মানুষেরা কী পাবেন, কী কী উন্নতি হবে, এসব বিষয়ে তার আগ্রহ।

তিনি বলেন, ‘পথাবেলা ঘুম থাইকা উইট্টা হাওরে জমিতে কোন লইয়া পানি হিছা যাই, হারা দিন কাম কইরা সন্ধ্যায় বাড়িত আই, এর লাইগা রাইতের সভাই ভালা। ক্ষেতের কামকাজের কোনও অসুবিধা হয় না।’

লম্বাবাঁক গ্রামের মিয়া ধন (৩৬)  বলেন, ‘আমরার ভোট ইমুনি। দিনের সমুয় কোনও মানুষ বাইত থাকে না, হকলই হাওরে থাকে। এরলাগি দিনের বেলায় সভা করলে কেউ মানুষ পাইতো না। সবার উচিত রাইতের বেলা সভা সমাবেশ করা।’

এ ব্যাপারে জামাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গোটা হাওর এলাকার মানুষের এখন বোরো আবাদের সময়। এলাকার মানুষ ভোর বেলা জমিতে যায়, আবার সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে আসে। এটি এসময়ে বাস্তব চিত্র। তাই প্রার্থীদের রাতের বেলার সভা সমাবেশে লোকসমাগম বেশি হয়।’

3

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলা একটি হাওরবেষ্টিত এলাকা। যেকোনও নির্বাচনই হোক না কেন, বছরের এসময় কৃষক জমি চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই তাদের সুবিধার জন্য রাতে গণসংযোগ করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘আমি নিজে কৃষকের সন্তান। শৈশব থেকে খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে আমার ওঠাবসা। তারাই আমার প্রাণ। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করেছি। আমি তাদের মধ্যেই আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চাই। খেটে খাওয়া মানুষের কাছে আসতে রাতে গণসংযোগ করি। বিষয়টি কর্মী সমর্থকরাও উপভোগ করেন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে হাওরের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য হাওরে উড়াল সড়ক, রেল যোগাযোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও হাওরের অভ্যন্তরে কৃষকের ধান পরিবহনের জন্য হাওরের মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে দেবো। এছাড়া এলাকার উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিশাল সাইলো নির্মাণ করা হবে, চাষিরা যাতে সবজির ন্যায্য মূল্য পান।’