যশোরে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা, দাম নিয়ে সংশয়ে চাষিরা

22

ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের আলুচাষিরা। ক্ষেত পরিচর্যায় শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলন হবে বলেও আশা তাদের। তবে আলুর দাম কমে যেতে পারে বলেও সংশয় প্রকাশ করেছেন চাষিরা। 

জানা যায়, গত মৌসুমে আলুর ফলন বিপর্যয় ও দাম না পেয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। তবে আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবছর বিপুল পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন চাষিরা। জেলার সাতমাইল, খাজুরা, নোঙরপুর, তীরের হাট, আব্দুল্লাহপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠজুড়ে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ আলুর ক্ষেত। তবে ক্ষেত থেকে আলু তোলার পর ন্যায্য দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাও কাজ করছে চাষিদের মনে।

যশোর সদরের নোঙরপুর গ্রামের আলুচাষি মমরেজ আলী জানান, খারাপ আবহাওয়া ও আলুর বাজারদর কম থাকায় গতবার বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়। আর এ বছর সার, কীটনাশক ও শ্রম ব্যয় বেড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বীজের দামও। সব মিলিয়ে হেক্টর প্রতি এবারের উৎপাদন ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। তাই এবার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে ভবিষ্যতে আর আলু চাষ করবেন কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে কৃষি অধিদফতর বলছে, এ বছর যশোরে আলুর বাম্পার ফলন হবে। চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরে ক্ষেতে ভাইরাসজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিলেও এবছর তেমন কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। যেকারণে কৃষকদের অনেক বেশি আশাবাদী মনে হয়েছে।

এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা এলাকার কৃষক রমজান আলী জানান, এ বছর ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন পর এসব জমি থেকে আলু তোলা হবে। ইতোমধ্যে কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আলু সংরক্ষণের জন্য জেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বুকিং দেওয়ায় আমরা সুযোগ পাচ্ছি না।’

1

কৃষক শরাফৎ আলী বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর আলু চাষে লোকসান হচ্ছে। তবে এ মৌসুমে উপযুক্ত আবহাওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে বুঝতে পারছি না। কোল্ড স্টোরেজগুলো বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেওয়ায় সমস্যা হতে পারে। তারা অতীতের মতো কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ।’

কৃষকরা জানান, আলুর দাম মণপ্রতি ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা হলে লাভবান হওয়া যাবে। কিন্তু মৌসুমে এই আলুর দাম পাওয়া যায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। সেক্ষেত্রে তাদের অনেক ক্ষতি হয়।

যশোর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবু ছায়াদ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আমরা কৃষকদের সুষম মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর আলুর চারা খুব ভালো হয়েছে। তবে আলুর দাম যেভাবে কমে আসছে এভাবে কমলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে বলে শঙ্কাও রয়েছে চাষিদের মনে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘শীত বাড়লে আলুর ফলনও ভাল হয়। এ জেলায় কার্ডনাল, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। এরমধ্যে যশোর সদরে রেকর্ড সংখ্যক জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এছাড়া চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মণিরামপুরসহ অন্য উপজেলাতেও আলুর আবাদ ভালো হয়েছে।’ সামনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে কৃষক আলুতে এবার লাভের মুখ দেখবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।