নেত্রকোনার মগড়া ও ধলাই নদীতে ধান চাষ!

11


নেত্রকোনার মদন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মগড়া নদী। একসময় খরস্রোত থাকলেও এখন পানিও নেই বললেই চলে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পলি-বালি জমে নদীটি এখন তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বেদখল হচ্ছে নদীর বিভিন্ন অংশ। নদীর কোনও কোনও অংশে ফসলের চারা রোপন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ধলাই নদীর একটি শাখা ফতেপুর ফেরিঘাটের  মগড়া নদীর মোহনা থেকে শুরু করে রামগোপালপুর, ছত্রকোনা, বিন্নী হয়ে ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আবার দড়িবিন্নী গ্রামের পাশে মগড়া নদীতে মিশেছে। অপর শাখাটি দেওয়ান পাড়ার সামনে দিয়ে আলমশ্রী, রোদ্রশ্রী, মাখনা, শিবপাশা, বাড়ৈউড়া, তিয়শ্রী, বাস্তা, চন্দ্রতলা, রাজতলা, বাঁশরী হয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কৈজানি নদীতে মিশেছে। এই দুটি শাখা নদীতে পলিজমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর অংশ জমির মালিকরা দখল করেছে। সেসব স্থানে ধান চাষ হচ্ছে এখন। ফলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদীর মূল সত্তা।

মদন উপজেলার কলেজ পড়–য়া একজন শির্ক্ষাথী ফয়েজ আহমদ হৃদয় বলেন, ‘এই নদীর ইতিহাস আমরা শুধু এলাকার প্রবীণদের কাছে শুনেছি। কিন্তু নদীর প্রকৃত রূপ আর দেখতে পাইনি। তাই নদীটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’  

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর কোনও কোনও স্থানে চর, আবার কোথাও কোথাও হাঁটুপানি রয়েছে। নদীর ওপরের ভাগে ধানের বীজতলা ও একটু নিচে ধান রোপন করা হয়েছে। মনে হয় নদীর কোনও অস্তিত্ব নেই। এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।

তিয়শ্রী গ্রামের কৃষক আজিম মিয়া জানান- কৃষি কাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদীপাড়ে বসবাসকারী মানুষ। এছাড়া পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই জনগণের। এতে নদী পাড়ের গ্রামের জেলেরাও বিপাকে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, যেভাবে নদী গুলো দখল হচ্ছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।

তিয়শ্রী বাজারের ব্যবসায়ী আরজু মিয়া জানান- এক সময় এই নদীপথে লঞ্চ, কার্গো, ট্রলার চলাচল করত। কয়েক বছর আগেও এমন সময় বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন নদী মরে গেছে। নৌপথ বলতে আর কিছু নেই।

হাসনপুর গ্রামের জেলে বিসু বর্মণ বলেন, ‘আগে মগড়া ও ধলাই নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদী শুকিয়ে ফসরি মাঠে পরিণত হওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। ’

ধলাই নদীতে বোরো ধান চাষ করা কৃষক ফতেপুর গ্রামের ইনঞ্জিল খান জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমার জমির পাশে নদীতে ধান চাষ করছি। তবে সরকারিভাবে কোনও নিষেধ এলে আমি ধান চাষ করা হবে না।  

স্থানীয়রা বলছেন, জরুরিভিত্তিতে নদী খনন করা না হলে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে এই নদী বিলীন হয়ে যাবে।

পরিবেশবাদী ও মদন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোতাহার আলম চৌধুরী জানান, ‘নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় মানুষের ব্যয় বাড়ছে। নদীর উপকার থেকে লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন।’ নদীগুলো জরুরিভিত্তিতে খননের দাবি জানান তারা।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওয়ালীউল হাসান বলেন, ‘মদন উপজেলা দিয়ে যে মগড়া নদী প্রবাহিত হয়েছে তার খনন কাজ শুরু হয়েছে। ধলাই নদী খননের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ এর নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করবো।’