শাটার বন্ধ করেও রেহাই পেলেন না ফেনীর তিন দোকানি

স্ত্রীর সঙ্গে ইব্রাহিমরাজধানীর চকবাজারে আগুন লাগার সময় দোকানে শাটার বন্ধ করে বাঁচতে চেয়েছিলেন ফেনীর তিন দোকানি। কিন্তু দোকানের মধ্যেই দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন তারা। তিন দোকানি হলেন- ফেনীর ইব্রাহিম হোসেন (৩০), আনোয়ার হোসেন (২৭) ও সুজাউল হক। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে ওয়াহিদ হাজি মার্কেটে পান দোকানে কর্মব্যস্ত সময় কাটছিলেন। এ সময় হঠাৎ ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যান তারা।

নিহতদের মধ্যে ইব্রাহিম হোসেন ও  আনোয়ার হোসেন ফেনী সদরের লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামপুর ভূঞাবাড়ির বাসিন্দা। অপর  নিহত সুজাউল হক ইব্রাহিমের শ্বশুর। সে সোনাগাজীর উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের গোয়াহিলা গ্রামের বাসিন্দা। তারা তিনজনই পান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আনোয়ার হোসেননিহত ইব্রাহিমের বড় ভাই জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে ওয়াহিদ হাজী মার্কেটে পানের ব্যবসা করতেন তার ভাই। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একই বাড়ির নিহত অনোয়ার ও ইব্রাহিমের শ্বশুর সুজাউল হকও জড়িত রয়েছেন। ইব্রাহিম পাঁচ বছর আগে সুজাউল হকের মেয়ে রোকসানা আক্তারকে বিয়ে করেন। তার দুই মেয়ে মামুনা আক্তার (৩) ও মাঈমা আক্তার (১) নামে দুই শিশুসন্তান রয়েছে। আনোয়ার হোসেন এক বছর আগে বিয়ে করেন। তার রয়েছে এক বছরের এক মেয়েসন্তান।’ স্থানীয়রা জানান, পান ব্যবসায় জড়িত হয়ে ইব্রাহিম ও তার সহকর্মীদের বেকারত্বের অবসান হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ইব্রাহিম পাটোয়ারী জানতে পেরেছেন, ‘ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় রানা টেলিকম, বিপরীতে হাবিব টেলার্স, হায়দার ফার্মেসিসহ আশেপাশের সব দোকান সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাটার বন্ধ করে দেয়। সবাই ভেবেছিল শাটার বন্ধ করে দিলে আগুন থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্ত আগুনের তীব্রতা বাড়ার কারণে সেখানেই পুড়ে মারা যায় তারা।’

এদিকে ইব্রাহিম হোসেন, আনোয়ার হোসেন, সুজাইল হক মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার বিকালে নিহতদের স্বজনেরা তাদের শনাক্ত এবং লাশ গ্রহণ করেছে বলে জামাল উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চার ঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ৬৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।