হবিগঞ্জ বিসিক অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার মাটির সামগ্রী তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এই পরিবারগুলোতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কুমার পাড়ার পরিবার পরিজন নিয়ে মাটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হাড়ি-পাতিল, পশু-পাখি, মাটির ব্যাংকসহ বাহারি পণ্য তৈরিতে রব্যস্ত রয়েছেন কুমাররা। রোদে শুকিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে তারপর নিপুন তুলির আঁচড়ে মাটির তৈরি জিনিসগুলো রঙে রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়। রঙের কাজ শেষ হলেই মেলার জন্য প্রস্তত রাখা হয়।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আব্দুর রহিমপুর কুমার পাড়ার কারিগররা নির্মল পাল জানান, ‘মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকাতে আমরা বছরের অধিকাংশ সময় বেকার সময় পার করি। তবে বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে ফাল্গুনের পরপরই মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতে শুরু করি। মাটির জিনিসের ভালো বাজার তৈরির উদ্যোগ নিলে আমরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারতাম।’
একই গ্রামের শাপলা রানী পাল বলেন, ‘আমরা বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এখন পুরো ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে দিন দিন মাটির তৈরি জিনিসের কদর কমে যাচ্ছে। সরকার থেকে আমাদের সহায়তা প্রদান করলে আমরা আরও বেশি করে পণ্য তৈরি করতে পারবো।’
একই গ্রামের কানু পাল জানান, ‘চৈত্র মাসে আমাদের কাজ বেশি থাকে বৈশাখী মেলার জন্যই। বাকি দিনগুলো তো বসেই কাটে। বাপ দাদার কর্ম দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার থেকে আমাদের লোন কিংবা আর্থিক অনুদান দিলে আমরা অনেকটা বেঁচে যেতাম। তারপর আমাদের পৈত্রিক কাজ করে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’
মিতু পাল জানান, ‘চৈত্রের শেষ দিকে আমাদের কাজের ব্যস্ততা থাকার কারণে ছেলে-মেয়েদের দিয়েও কাজ করাতে হয়। আর কদিন পরেই বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরই আমাদের মেলার জন্য খেলনা তৈরি করতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই মিলে পুরোদমে কাজ করে চলেছি।’
হবিগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরের কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল আবছার জানান, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলার কুমারপাড়ার কারিগররা নানা ধরনের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করেন এবং তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। তাদের জন্য আর্থিক ঋণসহ নকশা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে বিসিক। মৃৎ শিল্পকে রক্ষা করতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অনেক পরিবারকে বিসিকের পক্ষ থেকে আর্থিক ঋণ সহায়তা করা হয়েছে।’