নুসরাত হত্যা

প্রশাসনের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে সোনাগাজীতে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দল

সোনাগাজীতে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দলমাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে ফেনীর সোনাগাজীতে এসেছে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তদন্ত দলের প্রধান ডিআইজি এসএম শেখ  রুহুল  আমীনের নেতৃত্বে  তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান। পুলিশ সদর দফতরের পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল মাদ্রাসার অভ্যন্তরে সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে যান এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ৬ এপ্রিল  এখানে নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে ঢেকে নিয়ে  গায়ে কেরাসিন ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

পুলিশের এই তদন্ত কমিটির সদস্যরা নুসরাত যে কক্ষে আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন সেই কক্ষটিও  ঘুরে দেখেন।  পরে তারা উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতেও যান। সেখানে অবস্থান কালে তারা আশপাশ ঘুরে দেখেন। পরে তারা নুসরাতের কবর জিয়ারত করেন এবং নুসরাতের বাবা এ কে এম মুছা, তার দুই ভাই ও মা’র সঙ্গে একান্তে কিছু সময় নিয়ে কথা বলেন।

তদন্ত দলের প্রধান ডিআইজি রুহুল আমীন  সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্ত দল ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনসহ প্রশাসনের কোনও ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে। আগামীকালও তদন্ত দল সোনাগাজীতে অবস্থান করবে। তদন্ত শেষে এ নিয়ে বিস্তারিত গণামাধ্যকে জানানো হবে।’

এই সময় তার সঙ্গে তদন্ত দলের সদস্য একজন  পুলিশ সুপার, দুই জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন  পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও  ছিলেন।সোনাগাজীতে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দল

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিন পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশানের (পিবিআই) প্রধান প্রধান বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রাথমিক তদন্তের অগ্রগতি উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটিও ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনসহ প্রশাসনের কোনও ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবে। তদন্ত শেষে  এই কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তদন্তদল আগামীকাল বৃহস্পতিবারও তদন্ত কাজ  চালাবেন।

উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে তাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।