চোরের শাবলের আঘাতে মারা যান নারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মারুফা

গ্রেফতার হওয়া মহসিন শেখ

বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী নারী মেডিক্যাল অফিসার মারুফা বেগম হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পর ঘাতক মহসিন শেখকে গ্রেফতার করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার (১৭ এপ্রিল) মহসিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মহসিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে জানায়, চুরি করতে গিয়ে মারুফার মাথায় শাবল দিয়ে সে আঘাত করে।

গ্রেফতারকৃত মহসিন শেখ পিরোজপুর জেলার খানাকুনিয়ারী এলাকার মোস্তাফা শেখের ছেলে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবদুল হালিম জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১৭ এপ্রিল চট্টগামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে মোবাইল ব্যবহারকারী মহসিন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ভোলায় শ্বশুরবাড়িতে থাকে। ঘটনার আগের দিন সে ভোলা থেকে বরিশাল এসে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। এরপর দিনের বেলায় মারুফা বেগমের ভাড়া বাসার আশেপাশে চুরির উদ্দেশ্যে ঘুরে দেখে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ আলম আসামি মহসিন শেখের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার দিন গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১টার দিকে মারুফার ফ্ল্যাটের পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে শাবল নিয়ে অবস্থান নেয় মহসিন। সেই ছাদ থেকে চুরি করার উদ্দেশ্যে মারুফার ফ্ল্যাটের বারান্দায় প্রবেশ করে। বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সে ফ্ল্যাটে ঢুকে মারুফার বিছানার পাশে শাবল রেখে চেয়ারের ওপরে থাকা ভ্যানিটিব্যাগ নিয়ে বারান্দা দিয়ে পাশের বাসার ছাদে চলে যায়। ভ্যানিটিব্যাগে ৩০-৪০ টাকা পেয়ে পুনরায় মারুফার ঘরে থাকা স্টিলের আলমারি খুলে টাকা খুঁজতে থাকে। শব্দ পেয়ে মারুফা জেগে উঠে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকলে মহসিন তার মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে। মারুফার রক্তক্ষরণ দেখে মহসিন দ্রুত বারান্দা দিয়ে পাশের বাসার ছাদে চলে গিয়ে নির্মাণাধীন আরেকটি ভবনে ফজরের আজান পর্যন্ত অবস্থান নেয়। তারপর আজানের সময়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে বের হয়ে লঞ্চে ভোলায় চলে যায়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ওই ফ্ল্যাট থেকে মারুফা বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহত মারুফা নগরীর কাশীপুর গণপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী এবং কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে।

বর্তমানে জহিরুল হায়দায় চৌধুরী ঢাকায় প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত। চাকরির সুবাদে নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা সুলতান আহমেদের মালিকানাধীন ‘শরীফ মঞ্জিলের’ তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন মারুফা। নিঃসন্তান ছিলেন এই দম্পতি। মারুফার ভাই মো. জামাল উদ্দিন মণ্ডল বাদী এ ঘটনায় মামলা করেন।