ষষ্ঠ বিয়েতে অনুমতি না দেওয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম!

বরগুনা

প্রথম তিন স্ত্রীর সঙ্গে এখন সম্পর্ক নেই। থাকেন চতুর্থ ও পঞ্চম স্ত্রীর সঙ্গে। সম্প্রতি আবারও বিয়ে করার অনুমতি চান দুই স্ত্রীর কাছে। পঞ্চম স্ত্রীর অনুমতিও পান তিনি। কিন্তু বাদ সাধেন চতুর্থ স্ত্রী। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথম স্ত্রীর সন্তান ও চতুর্থ স্ত্রীর ওপর চড়াও হন বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামের নিজাম মাতুব্বর। ষষ্ঠ বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগে তার নামে মামলা দায়ের করেছেন চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা বেগম।

রবিবার (১২ মে) আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় ৬ মে ঘরের মধ্যে আটকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী নাসিমাকে কুপিয়ে জখম করেন নিজাম মাতুব্বর। এ সময় নাসিমার চিৎকারে স্থানীয়রা উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত নাসিমা।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাসিমার বাহু, কোমর, পিঠ ও উরুতে গুরুতর জখম হয়েছে।’

এ ব্যাপারে নাসিমা বেগম বলেন, ‘বিয়ের ১২ বছরে অনেক মারধর করেছে। কিন্তু মেয়েটার (কন্যা সন্তান) মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করছি। আমার বিয়ের আগে দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। আরেকজনকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে নীলা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখন আবার ষষ্ঠ বিয়ের জন্য আমার সম্মতি চায়। সম্মতি না দেওয়ায় আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

নিজাম মাতুব্বরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রিয়ন বলেন, ‘বাবা এখন পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছেন। আবারও ষষ্ঠ বিয়ে করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি বাধা দেওয়ায় পিটিয়ে আমার হাত ভেঙে দিয়েছেন। বাবার জন্য আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না।’

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিজাম মাতুব্বর প্রথম বিয়ে করেন ১৯৯৫ সালে। সেই ঘরে তার দুই সন্তান আছে। প্রথম স্ত্রী তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেখানেও তার তিনটি সন্তান আছে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় বিয়ে করলেও সেই সংসার টেকেনি। পরে ২০০৭ সালে চতুর্থ বিয়ে করেন। এখানে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এরমধ্যেই জানুয়ারি মাসে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। পাঁচ মাস যেতে না যেতেই ষষ্ঠ বিয়ের জন্য পরিবারের সদস্যদের চাপ দিচ্ছিলেন নিজাম মাতুব্বর। পঞ্চম স্ত্রীর অনুমতি পেলেও অন্য সন্তান ও চতুর্থ স্ত্রীর কাছ থেকে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের মারধর করেন তিনি। হামলার শিকার হওয়ার পর ১১ মে (শনিবার) স্বামী নিজাম মাতুব্বরসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেছেন চতুর্থ স্ত্রী। অন্য আসামিরা হলেন, পঞ্চম স্ত্রী নীলা বেগম, পঞ্চম স্ত্রীর মা রেহেনা বেগম ও স্থানীয় চৌকিদার মো. জাকির।

একাধিক বিয়ে ও স্ত্রী নাসিমাকে মারধরের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত নিজাম মাতুব্বর বলেন, ‘ছেলে এবং স্ত্রী আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। এজন্যই কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি ইচ্ছা করে তাকে মারিনি।’

এ ব্যাপারে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ‘নিজাম মাতুব্বর একের পর এক বিয়ে করছে। আবার বিয়ে করতে বাধা দেওয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’