হাসপাতাল থেকে ৩২ লাখ টাকার ওষুধ চুরির সত্যতা মিলেছে

লালমনিরহাটলালমনিরহাট সদরে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের স্টোর থেকে ৩২ লাখ টাকার ওষুধ চুরির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। স্পেশাল সার্ভে কমিটি’র তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও সার্ভে কমিটির প্রধান ডা. মো. আব্দুল বাসেত বলেন, ‘সার্ভে কালে স্টক ও সরবরাহ পর্যালোচনায় ৩৪ প্রকারের ওষুধের গড়মিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেমি ফ্লোক্সাসিন, সেফুরাক্সিম ও মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটসহ ৩৪ পদের ওষুধের স্টক এবং সরবরাহের তালিকার মধ্যে কোনও মিল নেই। টাকার অঙ্কে প্রায় ৩০-৩২ লাখ টাকার ওষুধ নেই। অধিকতর তদন্তে এই টাকা বা ওষুধের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও সার্ভে কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘কিছু ওষুধ রেজিস্টারে আছে গোডাউনে নেই। কিছু ঔষধ সরবরাহ দেখানো হয়েছে, কিন্তু সরবরাহ করা হয়নি। রেজিস্টারে ঘষামাজা ও ওভার রাইটিং করা হয়েছে। এসব বিষয় অধিকতর তদন্ত করে দেখার জন্য রংপুর থেকে একটি তদন্ত টিম আসার কথা রয়েছে। তাদের তদন্তে হয়তো বিস্তারিত আরও কিছু আমরা জানতে পারবো।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ২১২ মিডফোর্ড রোডের মেসার্স বনানী মেডিক্যাল স্টোর, একই শহরের টিকাটুলির মেসার্স আলেয়া কর্পোরেশন ও ৬০/এ ডিস্টিলারি রোডের গেন্ডারিয়া এলাকার মেসার্স জাওয়াদ ড্রাগ হাউস নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে কার্যাদেশ পায় এবং ওষুধ সরবরাহ করে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ের দরপত্র ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বদলিজনিত কারণে সেই সময়ে দরপত্র করা হয়নি। আমি ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক পদে যোগদানের পর দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজে হাত দেই। এসময় সদর হাসপাতালের ওষুধের স্টক রেজিস্টার ও সরবরাহ রেজিস্টারের মধ্যে অসঙ্গতি দেখতে পাই। প্রকৃত ঘটনা কী সেটা জানতে আমি ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল স্টোর সার্ভে করার জন্য এই হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. আব্দুল বাসেতকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেই। গত ২২ মে ওই কমিটি আমাকে ওষুধ স্টকের গড়মিল সংক্রান্ত একটি লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছে। আমি বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. অমূল্য চন্দ্র সাহাকে অবহিত করেছি।’

গত ২৩ মে স্টোর কিপার মো. সাহেদুল হক ছোটনকে প্রশাসনিক কারণে নীলফামারী জেলার ডিমলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের একই পদে স্ট্যান্ড রিলিজ (বদলি) করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ওষুধ চুরির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক আছে কিনা সেব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।   

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টোর কিপার মো. সাহেদুল হক ছোটন ওষুধ সরবরাহ রেজিস্টার ও স্টক রেজিস্টারের তথ্য গড়মিলের তথ্য স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ফার্মাসিস্টকে সঠিকভাবে ওষুধ সরবরাহ করেছি। কিন্তু রেজিস্টারে আমার হাতের লেখা কেন এবং ঘষামাজা কেন সেটা বুঝতে পারছি না।’