সাগরে মাছ ধরার ওপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এভাবেই নিজের হতাশার কথা জানাচ্ছিলেন জেলে নুর মোহাম্মাদ। সোমবার (২৭ মে) পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়।
নুর মোহাম্মাদ বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলারের একজন ভাগি জেলে। তিন সন্তান, মা বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে সাত জনের সংসার তার। সাত জনের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যার ওপর ভর করে চলে পুরো সংসার। নিজে বিদ্যালয়ে যেতে না পারলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬৫ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে বলে জানালেন তিনি।
শুধু নুর মোহাম্মাদই নন টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে হতাশার ছাপ পড়েছে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে।
বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটের জেলে আলম মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোরা ছোডকাল হইতে মাছ ধরি। মাছ ধরা ছাড়া আর কোনও কাম শিহি নাই। অ্যাহন ৬৫ দিন মাছ না ধরতে পারলে কী করমু, কী খামু, কিছুই কইতে পারি না। সরকার মোগো লগে এরহম হরলে মোরা যামু কই?’
এই ঘাটেই কথা হয় আব্বাস, আউয়াল, মোকছেল, মহিউদ্দিনসহ একাধিক জেলের সঙ্গে। তারা জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য একরকম মরণ ফাঁদ। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জেলেদের মাছ ধরা নিশ্চিত না করলে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে হাহাকার শুরু হবে।
জেলেরা আরও জানান, প্রথমে ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ,পরে ২২ দিন মা ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা, এরপর বিভিন্ন সময় ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এখন আবার শুরু হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘জেলেদের ওপর এরকম জুলুম আল্লাহ সহ্য করবেন না। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।’
তবে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা আরও বেশি বেশি ইলিশ শিকার করতে পারবেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সময় দেওয়া হলে কয়েকগুণ ইলিশ বেশি উৎপাদন হবে। এতে জেলেরাই লাভবান হবেন।’
তিনি জানান, ২০১৫ সালে আইনটি পাস হলেও প্রথম দিকে শুধু চট্টগ্রামের বড় বড় ফিশিং জাহাজের জন্য তা কার্যকর ছিল। এ বছর গোটা উপকূলীয় জেলেদের ওপর বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।