অনুদানবঞ্চিত ডুমুরিয়ার ৭০০ জেলে পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

ইলিশ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞামা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলছে। যা ৯ অক্টোবর শুরু হয়েছে, চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময়ের জন্য দেশের সর্বত্র ইলিশ শিকারিরা অনুদান হিসেবে চাল পাচ্ছেন। কিন্তু খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মৎস্যজীবীরা এ থেকে বঞ্চিত। এর ফলে এ উপজেলার ৭শ' ইলিশ শিকারি জেলে পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলা মৎস্য অধিদফতর জানায়, ডুমুরিয়ার ইলিশ শিকারিরা মৎস্যজীবীর তালিকাভুক্ত না হওয়ায় এমনটি ঘটেছে। আগামী বছর থেকে তারা অনুদান পাবে। বলে উপজেলা মৎস্য অধিদফতর আশা প্রকাশ করেছে। 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলায় পাঁচ হাজার ১০০ জন তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই  ১২ মাস মৎস্য আহরণ করে জীবিকা অর্জন করে থাকেন। এছাড়া আরও ৭০০ জন গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশ শিকার করে থাকেন। অন্যরা স্থানীয় ভদ্রা, গ্যাংরাইল, হরি নদী ও বিভিন্ন খাল-বিলে মাছ শিকার করেন। 

মঠবাড়িয়া এলাকার জেলে সুকুমার বিশ্বাস জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলছে। এ কারণে মাছ শিকার বন্ধ। সরকার ইলিশ শিকারিদের অনুদান দিচ্ছে। কিন্তু ডুমুরিয়ার জেলেরা সরকারি এ অনুদান পাচ্ছেন না। মাছ শিকারও বন্ধ, অনুদানও নেই। অতি কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ডুমুরিয়ার জেলেরা কখনও সরকারি এ অনুদান পায়নি। 

এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে মাছ শিকার করতে গেলে গত ১৪ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়ায় মুক্তি বিশ্বাস নামে এক জেলেকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার তিন দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় উদ্ধার হওয়া তার জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। তিনি বরাতিয়া এলাকার নিমাই বিশ্বাসের ছেলেু।

শরাফপুর-তৈয়বপুর এলাকার জেলে বিষ্ণু বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের সর্বত্র মৎস্যজীবীরা সরকারি অনুদান পায়। কিন্তু ডুমুরিয়ার জেলেরা বঞ্চিত। তাদের জমি নেই। তাই ক্ষেতের কাজও করতে পারে না। বিকল্প কাজ না থাকায় এখন সংসার চালানোর উপায় নেই।’

ডুমুরিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘ইলিশ শিকার বন্ধের মধ্যে সরকারি সহায়তা না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে আছে ডুমুরিয়া উপজেলার ৭০০ জন ইলিশ শিকারি। ছোট নদীতে ইলিশ নেই, সেখানে মাছ শিকার করলে ইলিশের ক্ষতি নেই। কিন্তু জেলেরা স্থানীয় নদীতেও জাল ফেলতে পারছেন না।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দাকোপ, বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় মৎস্যজীবীরা সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু ডুমুরিয়ার মৎস্যজীবীরা এ থেকে বঞ্চিত।’ তিনি এ উপজেলার সব জেলেকে সরকারি অনুদানের আওতায় নেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় ৭শ’ সামুদ্রিক ইলিশ শিকারি রয়েছেন। কিন্তু তারা ইলিশ শিকারির তালিকাভুক্ত নন। এ কারণে ডুমুরিয়ায় এমনটি ঘটেছে। যা এ বছর তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি জানান, ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু মাছ ধরায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে, মাছ ধরার ক্ষেত্রে ইলিশ ধরার জাল, বেহুন্দী ও কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ জানান, আগামী বছর থেকে ডুমুরিয়ার ইলিশ শিকারিরা সরকারি সহায়তা ২০ কেজি হারে ভিজিএফের চাল পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও জানান, খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে দিঘলিয়ার ৪০০, বটিয়াঘাটার ৭০০ ও দাকোপের এক হাজার জেলে সরকারি অনুদান সহায়তা হিসেবে পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন।