এ তথ্য নিশ্চিত করে অধ্যাপক সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হামলায় ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই আহত, লাঞ্ছিত, হেনস্তা হয়েছেন। বিষয়টাকে শুধু দুঃখজনকই বলতে পারলাম। এর বেশি কিছু করতে পারলাম না। একটা নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত নিতে পারি না। বিচার চাইতে পারি না। তাহলে শিক্ষক সমিতিতে কি আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলাম!’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই আমরা পদত্যাগের কথা ভাবছি। বেশ কিছু বিষয়ে সমিতিতে কাজ করতে গিয়ে আমরা বিব্রত হয়েছি। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ, আরেকদিকে শিক্ষকদের স্বার্থ, কোনও বিষয়েই আমরা বোধহয় সেরকম ভূমিকা রাখতে পারলাম না। তাই শিক্ষক সমিতিতে পদ আগলে রাখার কোনও মানে হয় না।'
আজ মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমারের কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক সোহেল রানা।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন চলছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আট জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে হামলায় উসকানি দিতে দেখা গেছে।
এই ঘটনার পর দুপুরে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশের কথা জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর হল ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অনেক শিক্ষার্থী নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসভবনের সামনের ফটকে অবস্থান নেন তারা। আজ মঙ্গলবার নিয়ে টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য। তবে ছাত্রলীগের হামলার পর দুপুর ১টার দিকে পুলিশ, জাবি শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। উপাচার্য তাকে ‘মুক্ত’ করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘বিভিন্ন হল থেকে সংবাদ আসছে প্রশাসনের লোকজন জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। কিন্তু হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক বের করে এ জমায়েত কমাতে পারবেন না। যত নিপীড়ন চালাবেন এই জমায়েত ততই বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি এখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। আপনারা হামলা করতে পারেন কিন্তু আমি শিক্ষক হিসেবে আমার কোনও শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করতে দেবো না।’
আরও পড়ুন-
জাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা