মোবাইল ছিনতাইয়ের সূত্র ধরে লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটন

মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনগাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কলেজছাত্র ফাহিম মিয়ার (২১) মোবাইল ছিনতাই ঘটনার সূত্র ধরে গাইবান্ধার-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় সাবেক এমপি (অব.) কর্নেল ডা. আবদুল কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চার খুনিকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে তিন জন ফাহিমের মোবাইল ছিনতাইয়ে অংশ নিয়েছিল।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটন হত্যার পর প্রায় দুই মাস ধোঁয়াশায় ছিল পুলিশ। পরে লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বন্দুকের সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান হয়। পুলিশ জানায়, লিটন হত্যার আগে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ পাকা সড়কের নতুন বাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র ফাহিম মিয়া। রাতে নিজের মুরগির খামারের পাশে বসে থাকার সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ফাহিম মিয়ার চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসে। পরে তারা আলো জ্বালিয়ে একটি পিস্তল পড়ে থাকতে দেখেন, তাতে ছয়টি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন ছিল। সেটি উদ্ধারের পর ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. সবুজ চৌধুরী সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশকে জানান। পুলিশ ফাহিমসহ স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে নানা তৎপরতা চালায় পুলিশ।  পরে মোবাইল ফোনের আইএমইএ নম্বর সংগ্রহ করা হয়। এরপর ট্র্যাকিং করে পুলিশ জানতে পারে যে, গাইবান্ধা শহরের পুরাতন ব্রিজ রোড এলাকার মুজাহিদ নামে এক যুবক ফাহিমের ছিনতাই হওয়া ফোনটি ব্যবহার করছেন।

পরে মুজাহিদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ২৫০০ টাকায় মোবাইলটি  তার পরিচিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের রায়হানের কাছে থেকে কিনেছেন। এরপর রায়হানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি আনোয়ারুল ইসলাম রানার কাছ থেকে মোবাইলটি কেনার কথা স্বীকার করেন। এরপর রানার পরিচয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর নানা দিক মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিশ। তদন্তে এমপি লিটন হত্যায় রানা, মেহেদী ও শাহীনের অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের তিন জনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে সাবেক এমপি কর্নেল আবদুল কাদের খাঁনের যোগসূত্র পাওয়া যায়।

ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘সাবেক এমপি কাদের খাঁনের একাধিক ক্যাডার বাহিনী ছিল। এই ক্যাডাররা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতো। এসব অবৈধ অস্ত্র দিয়ে রাতের আঁধারে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা ছিনতাই করতো। ’

এমপি লিটন হত্যার পর পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আবদুল কাদের খাঁনকে নজরদারিতে রাখেন। এর মধ্যে পুলিশ রানা, মেহেদী ও শাহীনকে গ্রেফতার করে। এরপর বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খাঁনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার রানা, মেহেদী ও শাহীন আদালতে তাদের জবানবন্দিতে ফাহিমের মোবাইল ছিনতাইসহ  লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

আরও পড়ুন- 

দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান এমপি লিটনের স্বজনরা

যেভাবে তৈরি হয় এমপি লিটন হত্যার প্লট