শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমতিক্রমে উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন, উপ-উপাচার্য ড. গোলাম রব্বানি এবং ট্রেজারার ড. মামুনুর রশিদকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অপর একটি প্রজ্ঞাপনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌফিক আলমকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা ফসসাল মাহমুদ।
এর আগে সোমবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
এদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সংহতি সমাবেশে বলা হয়, উপাচার্যকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা না হলে দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়া হবে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রশাসনিক অদক্ষতা, কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমেছে তাদের।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও ‘পাতানো’ সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে তৎকালীন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ মে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। পর দিন ৪ মে উপাচার্য শুচিতা শরমিন সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন তার সিন্ডিকেট সদস্য পদে পুনর্বহালের বিয়ষটি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় এ বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য। এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। এরপর ওই দিন দুপুরে আন্দালনরত শিক্ষার্থীদের ওই অংশ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবির আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তারা প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেছিলেন, আন্দোলনটি কতিপয় ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের তিনি বারবার অনুরোধ করেছেন যেন তারা ভুল পথে না যান এবং আন্দোলন থেকে ফিরে আসেন।