ফের সমাবেশ রোহিঙ্গাদের: ‘গাম্বিয়া’ ‘গাম্বিয়া’ স্লোগান

222

কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-এলাকায় সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ও দুপুরে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে ‘গাম্বিয়া’ ‘গাম্বিয়া’ স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছে রোহিঙ্গারা। 

জানা গেছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলার শুনানি নেদারল্যান্ডের হেগ-এ শুরু হয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়ে মামলাকারী দেশ গাম্বিয়াকে সমর্থন জানিয়ে কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গারা এসব কর্মসূচি পালন করেছে। রোহিঙ্গারা সমাবেশ করছে এমন কিছু ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল নিউজ (আরএনএন) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে।  সেখানে দেখা যায়, ক্যাম্পে জড়ো হয়ে রোহিঙ্গারা ছোট পরিসরে সমাবেশ করেন, যা দেখতে কক্সবাজারের ক্যাম্পের মতোই। 

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার ফজরের নামাজ শেষে উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পের পাহাড়ের ঢালে জড়ো হতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। পরে সেখানে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শত শত রোহিঙ্গা সমবেত হয়। এসময় তারা ওআইসি’র কাছেও মিয়ানমারের বিচার দাবি করেছে। এছাড়া টেকনাফের লেদা, জাদিমুরো, উখিয়ার বালুখালী, জামতলী, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ও সীমান্তে শূন্যরেখায় দোয়া মাহফিল করে মিয়ানমারের শাস্তি চেয়েছে রোহিঙ্গারা। তবে কিছু ক্যাম্পের খোলা জায়গায় জড়ো হয়ে সমাবেশও করেছে তারা।

উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা আমান উল্লাহ বলেন, ‘সকালে ক্যাম্পের কিছু লোক পাহাড়ের কাছাকাছি জড়ো হয়ে দোয়া মাহফিল করেছে, যাতে নেদারল্যান্ডের হেগ-এ শুরু হওয়ায় মামলায় মিয়ানমারের কঠোর শাস্তি হয়। রাখাইনে সেনাবাহিনীকে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘঠিত গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ সব অপরাধের শাস্তি তাদের পেতে হবে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা।’

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর এক নেতা জানান, তার ক্যাম্পে শুধু নামাজের সময় দোয়া হয়েছিল। যাতে মিয়ানমার বিরুদ্ধে করা মামলায় শুনানিতে রোহিঙ্গারা বিচার পায় এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাঠোর শাস্তি হয়। তবে অন্য একটি ক্যাম্পে কিছু মানুষ হাতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে জড়ো হওয়ার খবর শুনেছি।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আমির হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারে সেনারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এর বিচার চাই। এতো বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে না। এর সুষ্ঠ বিচার না হলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বাড়বে। ফলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হবে না।’   

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইবাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লোকজন জড়ো হওয়ায় খবর শুনেছি। তবে সেটি সমাবেশ কিনা নিশ্চিত নই। কেননা রোহিঙ্গাদের কোনও মিছিল-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবু এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনও সংবাদ আমার কাছে নেই। তাছাড়া যেখানে এক সঙ্গে ৮-১০ লাখ মানুষের বসতি, তা দেখতেও সমাবেশের মতোই লাগে।’   

উল্লেখ্য, আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করছে গাম্বিয়া। ১১ ডিসেম্বর শুনানি করবে মিয়ানমার। এরপর ১২ ডিসেম্বর এক সঙ্গে দু’দেশের শুনানি হবে।