বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আছাদুজ্জামান মিয়ার আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে বাদী দুলাল শরীফ আদালতের কাছে তার ছেলে রিফাত হত্যার বিবরণ পেশ করেন। তিনি ছেলে হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন এবং বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। মামলার এজাহার অনুসারে দুলাল শরীফ আদালতের কাছে রিফাত শরীফ হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বাদী আদালতে বলেছেন, তার ছেলে রিফাত শরীফকে আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজিরা বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে যখন কোপায় তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষী মনজুরুল হাসান জনের ফোন পেয়ে তিনি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার ছেলের শরীরে অসংখ্য কোপের জখম। রিফাত শরীফ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তখন রিফাত শরীফ তার বাবাকে (বাদী) ১২ জন আসামিসহ আরও ১২-১৩ জনের নাম বলেন। এছাড়া রিফাত শরীফকে আসামিরা কলেজ গেটের সামনে যেভাবে কুপিয়েছে তার ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি আসামিদের শনাক্ত করতে পেরেছেন।
আদালতে থেকে বের হয়ে দুলাল শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার ছেলের হত্যার বিশদ বর্ণনা দিতে পেরেছি আদালতে। আমি আশাবাদী, আদালতে ন্যায়বিচার পাবো।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বলেন, ‘বুধবার সকাল ৯টায় বরগুনা কারাগার থেকে আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইয়ূম রাব্বি আকন, রেজোয়ানুল ইসলাম টিকটক হৃদয়, হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, কামরুল হাসান সায়মুন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে মুক্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার চাচা আবু সালেহর সঙ্গে আদালতে হাজির হন। বেলা ১০টায় সাক্ষীর বক্সে সাক্ষ্য দিতে ওঠেন মামলার বাদী দুলাল শরীফ। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার তার জবানবন্দি দেওয়ার আহ্বান জানান। দুলাল শরীফ দীর্ঘ সময় নিয়ে তার পুত্র হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক সময় আদালত ১০ মিনিটের জন্য কোর্ট মুলতবি ঘোষণা করেন। আবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাদীকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা শুরু করলে তিনি আদালতের সাক্ষ্য বক্সে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার তাকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের সাত জন আইনজীবী।
গত ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও প্রিন্স মোল্লা জামিনে রয়েছেন। মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচার হবে শিশু আদালতে।