জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার জানান, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৪৮০ হেক্টর জমিতে খেজুরের গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে ১১ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০-৮১ কোটি টাকা। এই গুড় যাতে ভেজালমুক্তভাবে উৎপাদন ও বিক্রি হয় সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগের নিয়মিত মনিটোরিং রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার কোথাও খেজুরের ভেজাল গুড় তৈরি বা বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গুড়ের উৎপাদন বেশি হওয়ায় নাটোরের বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে আড়ত। নাটোর সদর উপজেলার স্টেশন বাজার, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজার, লালপুর বাজার, সিংড়া, নলডাঙ্গা, বাগাতিপাড়া ও গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এলাকায় রয়েছে এসব আড়ত। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নাটোরের তৈরি খেজুরের গুড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা।
সদর উপজেলার দিঘাপতিয়ার তেগাছি এলাকার বাসিন্দা ফরিদ জানান, তার পাঁচটি খেজুর গাছ রয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও তিনি গাছিদের সঙ্গে গুড়ের চুক্তি করে গাছগুলো লিজ দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, গাছিরা রস থেকে তৈরি গুড়ের তিন ভাগের এক ভাগ গুড় দেন। ওই গুড়ে পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রি করে টাকাও আসে তার। তবে তার অনেক প্রতিবেশীই টাকার চুক্তিতে গাছিদের গাছ দিয়েছেন।
সরেজমিন বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজারে অনেক গাছি ও সাধারণ কৃষককে গুড় বিক্রি করতে দেখা যায়। বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের কুনিপাড়ার গুড় বিক্রেতা আসকান জানান, গত কার্তিক মাস থেকে তিনি গুড় তৈরি ও বিক্রি করছেন। ২৫টি গাছ থেকে তৈরি গুড় থেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সপ্তাহে তিনি ১৫-১৬ কেজি বিক্রি করেন। বর্তমানে ৭৬ টাকা কেজি দরে তিনি গুড় বিক্রি করছেন।
লালপুর উপজেলার কদিমচিলান গ্রামের রতন জানান, তিনি ৪০টি গাছ চুক্তিভিত্তিক নিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সপ্তাহে প্রায় ৩০ কেজি গুড় বিক্রি করেন তিনি।
স্থানীয় আড়তদার পীযূষ জানান, বনপাড়া বাজারে ১০টি আড়ত রয়েছে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাটে গুড় কিনতে আসে সিরাজগঞ্জ, ফেনী, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারী। এছাড়া তারা নিজেরাও গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতি সপ্তাহে বড়াইগ্রামের আড়ত থেকে অন্তত ৬০ হাজার কেজি (৬০ মেট্রিক টন) গুড় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয়। তবে সব খরচ বাদে তাদের কেজিপ্রতি গড়ে দুই টাকা লাভ থাকে বলে দাবি করেন পীযূষ।
নাটোর শহরের নীচাবাজার এলাকার খুচরো গুড় বিক্রেতা গণেশ জানান, এখন গুড়ের খুচরা দাম ৯০-১১০ টাকা কেজি। প্রতিদিন গড়ে তিনি দু-তিন মণ গুড় বিক্রি করেন। তিনি জানান, নাটোরের খেজুরের গুড়ের স্বাদ বেশি তাই তাদের কাছ থেকে অনেকে গুড় কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠান।