১০ জনের মৃত্যুর পর থেকে হোমিও দোকানিরা পলাতক

101014137_1172375143105642_7467968982574694400_n

দিনাজপুরের বিরামপুরে বিষাক্ত স্পিরিট পান করে স্বামী-স্ত্রীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর থেকেই এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পাড়া-মহল্লায় প্রকাশ্যেই এসব স্পিরিটসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি হতো। একাধিকবার জানানোর পরও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এই ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। একজন হোমিও চিকিৎসককে গ্রেফতার, হত্যা মামলা দায়ের, একটি হোমিও দোকান সিলগালা ও বিপুল পরিমান রেক্টিফায়েড স্পিরিট উদ্ধার করেছে প্রশাসন।

গত বুধবার (২৭ মে) ভোররাতে বিরামপুর পৌরসভার হঠাৎপাড়া, মাহমুদপুর, ইসলামপাড়া, কাজীপাড়া মহল্লাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার লোকজন বিভিন্ন হোমিও দোকান ও বাড়ি থেকে নেশাজাতীয় স্পিরিট কিনে পান করে। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রায় ২৫ জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন মারা যান। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ মে) দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতর, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিরামপুর পৌরশহরের নতুনবাজার এলাকায় সরকার হোমিও দোকানে অভিযান চালায়। এসময় দোকানের মালিক পালিয়ে যায়, পরে দোকান থেকে স্পিরিট উদ্ধার ও দোকানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে শহরের অন্যান্য হোমিও দোকানিরা তাদের দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

100830693_902007123608036_8539234418626134016_n

এলাকার বাসিন্দারা জানান, আমাদের এই এলাকায় যে নেশা মহামারি আকার ধারন করার মূল কারণ স্পিরিট। তার সঙ্গে মেশানো হয় বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক কোমল পানীয়। এরই নাম কারও কাছে ককটেল, কারও কাছে এইটটি, পাগলু, ফিলিংস, কারও কাছে হট।

পৌর কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিরামপুরে কিছু হোমিও চিকিৎসক হোমিও ওষুধ বিক্রির আড়ালে অবৈধ স্পিরিট বিক্রি করে আসছে। এসব স্পিরিট পানে এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্পিরিট বিক্রির সঠিক নীতিমালা এবং তদারকি না করা হলে এলাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান হোসেন মেহেদী জানান, গত দুদিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন রোগী এসেছিলেন। এর মধ্যে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ১৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয় ও এখনও একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হোমিওপ্যাথির দোকান থেকে স্পিরিটের সঙ্গে কিছু যৌন উত্তেজক ও শক্তিবর্ধক ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করে। ফলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

100582993_256943915419424_8499036565572419584_n

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'ঘটনার পর হোমিও চিকিৎসক আসাব উদ্দিনের সরকার হোমিও হল থেকে ১৯টি কার্টনে ৪ হাজার ১০৪ বোতল রেক্টিফায়েড স্পিরিট এবং মাহমুদপুর আদিবাসী পাড়া থেকে ১০ লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশাসন সরকার হোমিও হলকে সিলগালা করেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।'

বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিথুন সরকার জানান, বিষাক্ত স্পিরিট পান করে বেশ কয়েকজন মৃত্যুর পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে আব্দুল মান্নান নামের একজন হোমিও চিকিৎসককে আটক করেছি। তাকেসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তারা আটক মান্নানের হোমিও দোকান ছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ হোমিও দোকান থেকে রেক্টিফায়েট স্পিরিট কিনেছিল।