ভিটামিন সমৃদ্ধ ভুট্টা ও উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাত উদ্ভাবন

106258594_903547406796172_1104111573328121034_n

গম ও ভুট্টার নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে ভুট্টার যে জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে তা ভিটামিন ও প্রো-ভিটামিন সমৃদ্ধ। আর গমের যে জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে, তা উচ্চ ফলনশীল ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। শুধু তাই নয় জাতটি দক্ষিণাঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চল, চর অঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলসহ সব ধরনের মাটিতেই আবাদের উপযোগী।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, দেশে যেসব ভুট্টা আবাদ হয় তার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয় মাছ কিংবা প্রাণীর খাবার হিসেবে। খুব অল্প পরিমাণ ভুট্টা মানুষের খাওয়ার উপযোগী হয়। মানুষের খাবার হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বাড়াতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। আর তাদের কাজের সফলতা এসেছে এবার। তারা নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন যা প্রো-ভিটামিন সমৃদ্ধ, বিশেষ করে ভিটামিন এ ও খাদ্য উপাদান অনেক বেশি, শিশুখাদ্যের জোগান দিতে এই জাত কাজ করবে।

গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে জমিতে যেসব ভুট্টা আবাদ হয় তাতে এক গ্রাম ভুট্টায় প্রায় ২ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তবে নতুন যে জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে, তাতে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি ভিটামিন এ পাওয়া যাবে। এছাড়াও এর প্রো-ভিটামিন এ মানুষের শরীরে গ্রহণমাত্রা সাধারণ ভুট্টার চেয়ে অনেক বেশি; যা সাহায্য করবে রাতকানা, বামনাকৃমি ও বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে।

সাধারণ ভুট্টা হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১১ টন, যেখানে নতুন উদ্ভাবিত ভুট্টার উৎপাদন হবে কমপক্ষে ১২ টন। এছাড়াও এই ভুট্টায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রপ কম। ফলে সব দিক দিয়েই লাভবান হবেন কৃষকরা।

82362760_267259044606176_6709176623187129372_n

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর মিয়া বলেন, 'যেসব ভুট্টা বর্তমানে চাষাবাদ হচ্ছে, তাতে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ভিটামিন এ থাকে না। ফলে তা শরীরে আত্মীকরণ হয় না। কিন্তু নতুন জাতের ভুট্টায় অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা সহজেই দেহে আত্মীকরণ হবে।'

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এছরাইল হোসেন বলেন, 'চলতি বছরে সারাদেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ মেট্রিক টন। আমরা গবেষণা করছি, কীভাব ভুট্টাকে পোলট্রি ফিড থেকে মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন জাতের এই ভুট্টায় প্রো-ভিটামিন সমৃদ্ধ বিশেষ করে ভিটামিন এ ও নিউট্রিয়েন্ট অনেক বেশি। এই ভুট্টার চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে বিদেশ থেকে বেবিফুড নিয়ে আসার প্রয়োজন থাকবে না।' আগামী বছর কৃষকদের মধ্যে বীজ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।'

শুধু তাই নয়, বারী গম ৩৩ নামে নতুন একটি গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যেই গমটি মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন তারা। নিজস্ব মাঠে পরীক্ষামূলক আবাদ করে সফলতার পর এবার তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের জমিতে জাতটি আবাদ করেছেন। সেখানেও মিলেছে সফলতা। নতুন এই জাতটি ব্লাস্ট প্রতিরোধী এবং সব ধরনের প্রতিকূলতা এড়িয়ে প্রায় সব মাটিতেই আবাদের উপযোগী। একইসঙ্গে অন্যান্য জাতের তুলনায় এই জাতটির ফলনও বেশি। তাই জাতটি সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এবারে তারা প্রায় ২৭ টন প্রজনন বীজ বিএডিসিকে সরবরাহ করবে, যা দিয়ে বিএডিসি তাদের নিজস্ব খামারে বীজ উৎপাদনের পর কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করবে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এছরাইল হোসেন বলেন, 'চলতি বছরে সারা দেশে প্রায় ১৩ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত বীজের মাধ্যমে আগামী বছরে প্রায় ১৭ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিগত ৩ বছর ধরে গবেষণার পর বারী গম ৩৩ নামের জাতটিতে সফলতা মিলেছে।' এই নতুন জাতের গম চাষ দক্ষিণাঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চল, চর অঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক।