২০ বছরেও বিচার হলো না সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার, মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শামছুর রহমান কেবল

শ্রদ্ধার্ঘ্য আর দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে যশোরে পালন করা হয়েছে প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শহরের কারবালায় শামছুর রহমান কেবলের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। 

উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি নূর ইসলাম, সম্পাদক আহসান কবীর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি শহিদ জয়, কোষাধ্যক্ষ গালিব হাসান পিল্টু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান, সাধারণ সম্পাদক মিলন রহমান, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুজ্জমান মুনিরসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা। 

শামছুর রহমান ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

গত দুই দশকেও এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়নি। আটকে রয়েছে এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া। গত ১৫ বছরেও আদালতের পিপির কাছে নথিপত্র আসেনি। ফলে মামলাটি ফ্রিজ হয়ে আছে।

২০০৫ সালে যশোর থেকে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে যশোরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।

খুলনার দ্রুত বিচার আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট আহাদুজ্জামান জানান, মামলার নথিপত্র অফিসিয়ালি তার হাতে পৌঁছেনি। ফলে তার কাছে কোনও তথ্য নেই।

তবে, এটি দ্রুত বিচার মামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ওই সময় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।

এরপর বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন করা হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

এ অবস্থায় মামলার বাদী শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

বাদীর এই আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না- তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন।

এরপর মামলার আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে বলে জানান যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম ইদ্রিস আলী।

প্রসঙ্গত, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। একজন পলাতক ও বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।