শিক্ষকের পর এবার কর্মকর্তা সমিতির নেতাকে পেটালেন নিরাপত্তাকর্মী!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির কক্ষে ৫ কর্মচারীর ভাঙচুর।

 
শিক্ষকের পর এবার কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদককে এটিএম কামরুল হাসানকে তার কক্ষে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক নিরাপত্তাকর্মী। তার নাম বদরুজ্জামান বাদল। এসময় তার সঙ্গে আরও পাঁচ সহযোগী ছিল।  ঘটনার পর পুলিশ বাদলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে।

সোমবার দুপুর ২টার দিকে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

তবে মারধরের বিষয়টি পরে পুলিশের কাছে অস্বীকার করেছেন বাদল।

জানা গেছে, শিক্ষককে পেটানোর মামলায় বহিষ্কৃত হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরিতে ফেরেন বদরুজ্জামান বাদল নামে ওই নিরাপত্তাকর্মী। এর ১৪দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটালেন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির দাবি দাওয়া নিয়ে আজ দুপুরে যৌথসভা করেন। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বিশেষ করে কর্মচারীদের একটি অংশ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে ঝামেলা হয়। সভা শেষে দুপুর ২টার দিকে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামরুল হাসান তার কক্ষে যান। এর কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তাকর্মী বদরুজ্জামান বাদল, সেকশন অফিসার ইকবাল হোসেন, শাহীন হোসেন, এসএম হাসান আলী, মালি মোস্তাক ও পিয়ন আরিফুল ইসলাম ওই কক্ষে গিয়ে কামরুল হাসানকে মারপিট এবং টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার ও প্রিন্টার ভাঙচুর করেন। পরবর্তীতে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ গোলাম রব্বানী ও স্থানীয় সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্পাসে যান এবং নিরাপত্তাকর্মী বদরুজ্জামান বাদলকে আটক করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামরুল হাসান বলেন, সভা শেষে নিজকক্ষে ফিরে আমি একটি চিঠির ড্রাফট করছিলাম। এসময় ট্রেজারারের অফিস কক্ষের সামনে বদরুজ্জামান বাদল চিৎকার করছিল। একটি ফোন আসায় আমি রিসিভ করি। একপর্যায়ে বাদল এসে আমাকে ফোন রাখতে বলে না হলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগে চড় মারে। এসময় বাদলের সঙ্গে থাকা কয়েকজন চেয়ার ছুঁড়ে মারে এবং অফিসকক্ষ ভাঙচুর করে। আমাকে মারার জন্য তারা দরজায় তালা লাগানোরও চেষ্টা করে। কিন্তু কর্মকর্তারা জড়ো হওয়ায় পারেনি। এ ঘটনায় উপচার্য ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবো। একইসঙ্গে মামলাও করবো।

অবশ্য মারপিটের কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বদরুজ্জামান বাদল। তিনি বলেন, কর্মকর্তা সমিতির নেতা কামরুল হাসান কর্মচারীদের গালিগালাজ করায় তার সাথে তর্ক হয়েছে। কোনও মারপিট বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে নিরাপত্তাকর্মী বদরুজ্জামান বাদলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দিলে নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত বাদল এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগে বহিষ্কার হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মাত্র ১৪দিন আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। ফলে আজকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, কামরুল হাসানের কক্ষে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বাদল এর আগে শিক্ষককে মারপিটের ঘটনায় চাকরি হারিয়েছিল। আদালতের আদেশে ফিরে এসে আবারও ঝামেলা শুরু করেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।