ফুলতলার সুপার ট্যানারির এমডি ফিরোজ ভূইয়া বলেন, ‘আমরা চেষ্ট করছি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী খুলনা বিভাগের কোনও চামড়া যাতে নষ্ট না হয়। চামড়ার যথাযথ দাম পরিশোধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এখানে চামড়া দিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর আমাদের এ উদ্যোগের ফলে জাতীয় সম্পদ চামড়া নষ্ট হওয়া বা পাচার হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ১৫০টি মাদ্রাসার কথা হয়েছে। চামড়া নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্যানারিতে নিয়ে আসার জন্য ২০টি গাড়ি প্রস্তুত রয়েছে। এখানে কোনও ফরিয়া বা ব্যবসায়ী চামড়া আনলে তাকে ফেরানো হবে না। এখানে চামড়া আসার হার প্রতি বছরই বাড়ছে।’
তিনি জানান, ২০১৬ সালে তার ট্যানারিতে ১০ হাজার পিস চামড়া আসে। ২০১৭ সালে এখানে ৩০ হাজার পিস চামড়া পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ হাজার পিস চামড়া আসে। ২০১৯ সালে আড়াই লাখ চামড়া আসে। এ বছর ৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এ ট্যানারিতে বর্তমানে চার লাখ পিস চামড়া মজুদ আছে। তিনি বলেন, তার ট্যানারিটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ। এখানে মাদ্রাসা থেকে চামড়া আসার পর তা প্রক্রিজাত করা হয়।
রূপসার কাজদিয়া মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আসাদুল্লাহ জানান, তিন-চার বছর আগে চামড়া তিন হাজার থেকে ৩২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। গত বছর ৫০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এবারতো আরও খারাপ অবস্থা। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৭টি চামড়া হয়েছিল। এবার ১৪টি পেয়েছি।’
শেখপাড়ার ইয়াসিন লেদারের মো. আবু জাফর বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়েও কম। এবার ১৮-২০ বর্গফুটের চামড়া ১০০ টাকা ও ৩০-৩২ বর্গ ফুটের চামড়ার দাম ৫০০ টাকা আছে। গত বছর এই চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দাম ছিল। ট্যানারি মালিকরা গত চার-পাঁচ বছরের টাকাই এখনও পরিশোধ করেনি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন। খুলনায় ৩০-৩২ জন ব্যাপারি রয়েছেন। সবারই টাকা বকেয়া আছে। আমার নিজেরই ১৫ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।’
আমান লেদার কমপ্লেক্সের আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘ট্যানারিতে গত বছরের চামড়া মজুদ রয়েছে। তাই ট্যানারিতে চামড়া নেওয়ার আগ্রহ কম। আর ব্যবসায়ীদের টাকাও আটকে আছে ট্যানারি মালিকদের হাতে। ফলে ব্যবসায়ীরাও চামড়া কেনার মতো অবস্থায় নেই। এর সঙ্গে আছে করোনার প্রভাব। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার বাজার গত বছরের চেয়েও খারাপ।’ ট্যানারিতে ২০ লাখ টাকা পাওনা আছে বলেও তিনি জানান।
কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা ও মসজিদে বাইতুল মুয়াজ্জম এর পেশ ইমাম ও চামড়া কমিটির প্রধান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১৫০ পিস চামড়া পাওয়া গেছে। আরও ১০-১৫ পিস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত বছর ২০৪ পিস চামড়া পেয়েছিলাম। এবার করোনার প্রভাবে মানুষের আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানি কম হওয়ায় চামড়া কম এসেছে।’
কেডিএ মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রেজোয়ান বলেন, দুটি চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। প্রত্যাশা ছিল ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু দুটি চামড়া ৩০০ টাকা দাম পাওয়া গেল। তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়েও এবার চামরার দাম হতাশাজনক। এভাবে চললে এ দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’