তদন্তের আগেই সরিয়ে ফেলা হলো স্কুল ভবন নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রী




সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে স্কুল ভবন নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রীতদন্তের আগেই চাঁদপুরের কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের চিহ্ন হিসেবে থাকা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বিকালে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নব-নির্মিত ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, পাথর, সিলেকশন বালু সরিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্সের (জেবি) লোকজন। বিকাল ৫টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মালবাহী ট্রাকে করে এসব মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়।

ভবন নির্মাণের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে অনিয়ম হয়েছে। তবে অনিয়মের বিষয়টিতে কোনও তদন্ত হয়েছে কিনা জানা যায়নি। এছাড়া যেহেতু নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা দায়ের হয়েছে। তাই আদালতের নির্দেশনা ব্যতীত মালামাল সরিয়ে নেওয়া ঠিক নয় বলে জানান স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আশ্রাফুল আলম রনির মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ণ দাস শুভকেও কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনিও রিসিভ করেননি।

তবে ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

উল্লেখ্য, ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ দরপত্রের মাধ্যমে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্স (জেবি)। এরপর অনন্ত ট্রেডার্স কাজটি বিক্রি করে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের সাবেক কর্মচারী আশ্রাফুল আলম রনির কাছে। ভবন নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রীঅভিভাবকদের অভিযোগ, শিডিউলে ঢালাই কাজে এক নম্বর সিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে দুই নম্বর সিমেন্ট, উন্নতমানের স্টোন চিপসের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের ভোতা পাথর। রডও কম দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ডাস্ট ও মাটি মিশ্রিত বালু।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় অভিভাবকরা একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরকে জানানোর পর এক পর্যায়ে তিনি কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরে ১৯ জুলাই উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইটে গেলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয়রা। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ারের গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর ইঞ্জিনিয়ার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার চার দিনের মধ্যেই গত ২৩ জুলাই উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহানকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২৮ জুলাই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রশাসন আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর আলমকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় বদলি করা হয়।

অনিয়মের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, এখনও ঢাকা থেকে চিঠি আসেনি। চিঠি পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কাজের গুণগতমান যাচাই করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।