আগুনমুখায় তলা ফেটে স্পিডবোটডুবি: পুলিশসহ ৫ জনের খোঁজ মেলেনি রাতে

আগুনমুখা নদীতে ডুবে যাওয়া ৫ জনের সন্ধানে চলছে উদ্ধার অভিযান

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কোরালিয়া থেকে পানপট্টির উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় চালকসহ ১৩ জন যাত্রী জীবিত উদ্ধার হলেও ৫ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের একাধিক টিম। উদ্বার তৎপরতায় অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে আসছে। তবে আবহাওয়া বৈরী হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে অভিযান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আগুনমুখা নদীর মাঝ বরাবর এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ যাত্রীরা হলেন,  রাঙ্গাবালী থানার কর্মরত  পুলিশ কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ (৪৫) ,কৃষি ব্যাংক রাঙ্গাবালীর বাহেরচর শাখার পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫), একটি এনজিওর খালগোড়া শাখার ঋণ প্রদানকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির হোসেন (২৮), শ্রমিক হাসান (৩৫) ও ইমরান (৩৪)।

জানা গেছে, বিকাল প্রায় ৫ টার দিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার কোরালিয়া লঞ্চঘাট প্রান্ত থেকে ১৮ জন যাত্রীসহ আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন একটি স্পিডবোট গালাচিপা উপজেলার পানপট্টি প্রান্তের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আগুনমুখার মাঝ নদীতে ঢেউয়ের তোড়ে তলা ফেটে ১৮ জন লোক নিয়ে স্পিডবোটটি তলিয়ে যায়।

দেড় ঘণ্টা পরে দুইটি স্পিডবোট দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে চালকসহ ১৩ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা সক্ষম হয়। পাঁচ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু তাদের জন্য উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। যদিও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি।

কোরালিয়া লঞ্চঘাটের ব্যবসায়ী বসির বলেন, এক ঘণ্টা সময় চলে গেছে তারপরও স্পিডবোটটি ওপারে পৌঁছায়নি। পরে স্পিডবোট মালিক দেড় ঘণ্টা পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

উদ্ধার হওয়া রাঙ্গাবালী বাহেরচর কৃষি ব্যাংক শাখার ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবলে পড়ে স্পিডবোটটির সামনের দিকের তলা ফেটে যায়।

উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানান,  আমরা চালককে বারবার স্পিডবোটটি ঘুরিয়ে ঘাটে নিয়ে আসতে বলি।  কিন্তু সে আমাদের কথার গুরুত্ব দেয়নি।

উদ্ধার হওয়া যাত্রী আলামিন বলেন, এই স্পিডবোটে অধিকাংশই ছিলাম চাকুরীজীবী। আমরা আজকে অফিসের কাজ শেষে দুই দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে এমন হলো। যারা নিখোঁজ তারা তো মনে হয় আর কোনদিনই জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরবেন না।

আবদুল রাজ্জাক মেম্বার বলেন, অবরোধের জন্য নদীতে কোনও জেলে নৌকা নেই যে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসবে। এর আগেও এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, জেলে নৌকা এগিয়ে আসার কারণে প্রাণহানি ঘটেনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী সার্কেল) মোহাম্মদ আলী জানান, রাঙ্গাবালী থানায় কর্মরত একজন পুলিশ সদস্য আজকে ছুটি নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল এবং ওই বোটে তাকে অনেকে দেখতে পেয়েছেন। ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখন সে নিখোঁজ কিনা সেটা নিশ্চিত হতে পারছি না।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৈরী আবহাওয়া ছিল। নদীবন্দরে ২ নম্বর ও সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহল ছিল। এর মধ্যে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া স্পিডবোট কিভাবে চলাচল করলো সে প্রশ্ন আসায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নদী বন্দর কর্মকর্তা খাজা সাদিকুর রহমান।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কয়েকটি দল কাজ করছেন। সতর্ক সংকেতের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্পিডবোট চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।